কখনও বেপরোয়া ভাবে ছুটে আসা ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পড়ছে সড়কের পাশের ঝুপড়িতে। কখনও ট্রাকের ধাক্কায় ভ্যান থেকে ছিটকে পড়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। কখনও বাইক আরোহীর দেহের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে ট্রাক। অটো ও ছোট গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কা লাগছে। পথ নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশ। বুধবার এ নিয়ে কর্মসূচি পালিত হয় পেট্রাপোলে।
সাম্প্রতিক সময়ে পেট্রাপোল থানার অন্তর্গত যশোর রোডে একের পর এক ঘটনায় চারজনের মৃত্যু ঘটেছে। জখম হয়েছেন আরও কয়েকজন। পেট্রাপোল থানার অন্তর্গত যশোর রোড আছে মাত্র চার কিলোমিটার। কিন্তু রাস্তা এখানে সরু। দু’টি ট্রাক পাশাপাশি যাতায়াত করতে পারে না। সড়কের দুপাশে আছে গাছ। ওই চার কিলোমিটার পথ যেন যান চালক ও পথচারীদের কাছে মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পেট্রাপোল বন্দর রোজ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে হাজার হাজার ট্রাক চলাচল করে। সরু সড়কের মধ্যে দিয়েও ট্রাক চালকেরা বেপরোয়া ভাবে ট্রাক চালাচ্ছেন। অভিযোগ, অনেক সময়ে ট্রাক চালকের পরিবর্তে খালাসিরাও ট্রাক চালান। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা। ওই চার কিলোমিটার পথে সড়কের পাশের রয়েছে তিনটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। অতীতে স্কুল পড়ুয়াও ট্রাকের ধাক্কায় মারা গিয়েছে। সড়কের পাশে ফুটপাত নেই। মূল সড়কের দু’পাশ বেশ ঢালু। ফলে বড় গাড়িকে জায়গা দেওয়ার অবস্থা থাকে না।
সাধারণ মানুষের মধ্যে পথ নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ আগেও দেখা গিয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। কিন্তু এ বার ওই চার কিলোমিটার পথে দুর্ঘটনা কমাতে ট্রাক চালক ও খালাসিদের নিয়ে পেট্রাপোল থানার পক্ষ থেকে বুধবার পথ নিরাপত্তা ও সচেতনতা শিবির করা হল। ট্রাকের চালক ও খালাসিদের মধ্যে পোশাকও বিতরণ করা হয়েছে। এ দিন সকালে প্রথমে স্থানীয় রাখালদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে পেট্রাপোল বন্দর পর্যন্ত একটি সচেতনা পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। যার সূচনা করেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, পেট্রাপোল থানার ওসি কল্লোল ঘোষ, বিএসএফ জওয়ান, জনপ্রতিনিধি, স্কুল পড়ুয়া, পরিবহণ শ্রমিক, ট্রাক ও অন্য গাড়ির চালকেরা। কল্লোলবাবু বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনা বাড়ানোর জন্য কর্মসূচি তো আমরা প্রায়ই করি। কিন্তু ট্রাক চালক ও খালাসিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রয়াস নেওয়া হল। এর ফলে দুর্ঘটনা কমবে বলে আশা করা যায়।’’পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় মঞ্চ করে ট্রাক চালক খালাসি সহ অন্য যান চালকদের সচেতন করতে পথ নাটক, আলোচনা, দুর্ঘটনার পরে কী ভাবে জখম ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া উচিত— সে সব সম্পর্কেও সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। এক প্রবীণ ট্রাক চালকের কথায়, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনও চালকই চান না দুর্ঘটনার কবলে পড়তে। কিন্তু রাস্তা সরু হওয়ার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।’’ তবে তাঁরা আরও সজাগ থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘২০১৪-১৬ সালের মধ্যে জেলায় নতুন গাড়ি রেজিট্রেশন হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ। ওই সময়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে ২০ শতাংশ।’’ এই ধরনের সচেতনামূলক কর্মসূচির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। নিয়মিত কর্মসূচি গ্রহণ করলে চালক এবং খালাসিদের মধ্যে সচেতনতা আনা সম্ভব হবে।