পানশালা থেকে বেরিয়ে বেয়াদপি করলেই খপাত

বাইক বাহিনীর দাপটে অতিষ্ঠ হাবরার মহিলারা। কখনও কারও ওড়না ধরে টান দিচ্ছে তারা। কখনও সাইকেল আরোহী কিশোরীর পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার উপক্রম করছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবরা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০৭:৪৯
Share:

বাইক বাহিনীর দাপটে অতিষ্ঠ হাবরার মহিলারা। কখনও কারও ওড়না ধরে টান দিচ্ছে তারা। কখনও সাইকেল আরোহী কিশোরীর পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার উপক্রম করছে। কখনও গায়ের কাছে এসে এমন জোরে হর্ন দিচ্ছে, আঁতকে উঠছেন তরুণী বধূ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাইক আরোহী যুবকের দল মদ্যপ বলে শোনা যাচ্ছে। ঘটনা শুধু এখানেই থেমে নেই, মদ্যপান করে বাড়ির সামনে হুজ্জুতের প্রতিবাদ করে দিন কয়েক আগে প্রহৃত হয়েছেন এক ব্যক্তি। শ্লীলতাহানি করা হয় তাঁর স্ত্রীর।

Advertisement

এত কিছুর পরে এ বার টনক নড়েছে পুলিশ-প্রশাসনের। বিশেষত, পানশালাগুলির আশপাশে নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ। ফলও মিলছে হাতেনাতে। ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছে শ’খানেক মদ্যপ। অন্তত ৪৫ জন বাইক-বাজকেও ধরেছে পুলিশ। চোংদা এলাকায় রাতে চলছে নাকাবন্দি। কিছু জুয়ারিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

হাবরার পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘পানশালাগুলির দিকে কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে পুলিশকে। মদ্যপ অবস্থায় রাস্তাঘাটে মহিলাদের সঙ্গে যাতে কেউ দুর্ব্যবহার করার সাহস না পায়, সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।’’

Advertisement

শহরের অনেকের সঙ্গে কথা বলে শোনা গেল বেশ কিছু খারাপ অভিজ্ঞতার কথা।

দিন কয়েক আগে রাত তখন পৌনে ৮টা। হাবরা শহরের হিজলপুকুর এলাকায় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন এক কলেজ ছাত্রী। আচমকা একটি মোটর বাইকে তিন যুবক এসে ওই ছাত্রীর গা ঘেঁষে চলে যায়। সাইকেল থেকে প্রায় পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয় ওই তরুণীর। শ্রীনগর এলাকায় সন্ধ্যার দিকে রাস্তায় হাঁটছিলেন এক বধূ। মোটর বাইকে করে এসে তাঁর গায়ের কাছে সজোরে হর্ন বাজায় কয়েকজন যুবক। আঁতকে ওঠেন ওই মহিলা। দাঁত বের করে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে হাসতে চলে যায় উচ্ছ্বৃঙ্খল যুবকের দল।

আরও কয়েক মাস আগে প্রফুল্লনগর এলাকায় রাত ৯টা নাগাদ কিশোরী মেয়েকে বাইকের পিছনে বসিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন এক ব্যক্তি। পথ আটকে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল দুই যুবক। তারা বাইকে বসে থাকা মেয়েটির হাত ধরে টানাটানি করে। বাবা প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধর করা হয়। পুলিশ অবশ্য দুই যুবককে গ্রেফতার করেছিল। ওই এলাকায় কলেজের পথে বাইক বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হন এক ছাত্রী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মূলত হিজলপুকুর, উত্তর হাবরা, বাদামতলা, স্টাফ কোয়ার্টার রোড, নগরউখরা থেকে কামারথুবা যাওয়ার রাস্তা, জয়গাছি থেকে রথতলা যাওয়ার রাস্তা, প্রফুল্লনগর-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যার দিকে সড়ক-ছাপ রোমিওদের দেখা মেলে। যশোর রোডে তুলনায় তাদের দৌরাত্ম্য কম।

হিজলপুকুর এলাকায় অনেকে টিউশন নিতে আসে। ওই এলাকায় রোমিওদের আনাগোনা বেশি বলেই বাসিন্দারা জানালেন। সন্ধ্যার পরে অভিভাবকেরা মেয়েকে একা পড়তে পাঠান না। আনা-নেওয়া করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে মোট পাঁচটি বার আছে। সন্ধ্যার পরে সেখানে বহু যুবক আসে। অভিযোগ, মদ খেয়ে ফেরার পথেই তাদের কেউ কেউ এমন বজ্জাতি করে। এ ছাড়াও, চোলাই-বাংলা মদের ব্যবসা চলে চোরাগোপ্তা। সেখানেও সস্তা নেশার টানে ভিড় জমায় অনেকে। যারা নেশা করে বেরিয়ে নানা কায়দা-কানুন দেখায়। ক’দিন আগে মদ্যপদের হাতে আক্রান্ত দম্পতির বাড়িতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেখানে গিয়ে তিনি জানিয়ে এসেছিলেন, এখন থেকে এলাকার থাকা বারগুলির সামনে পুলিশ নজরদারি চালাবে। বারে গিয়ে কেউ মদ খেতেই পারেন, কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে কোনও বেয়াদপি সহ্য করা হবে না। প্রয়োজনে পুরসভার পক্ষ থেকেও নজরদারি চালানো হবে। মন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরেই শুরু হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়।

পুলিশ জানিয়েছে, এখন থেকে রোজই শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নজরদারি চলবে। বাইকে করে কেউ বেলেল্লাপনা করলেই তার বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে।

ওই কাজের জন্য এক সাব ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে বিশেষ দল হয়েছে। ওই অফিসারের কাজ, মদ্যপ বাইক বাহিনী বা উঠতি রোমিওদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো। রোজ বেলা ২টো থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দলটি রাস্তায় থাকছে বলে জানানো হয়েছে।

অঙ্কন: নির্মাল্য প্রামাণিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন