ভাঙা প্রেমে পড়ুয়াদের আশ্রয় গাঁজা  

স্কুলের ইউনিফর্ম পরা ছেলেদের সেই কাণ্ড চোখে পড়ে স্থানীয় এক বাসিন্দার। খবর যায় পুলিশের কাছে। পুলিশ এসে মাঝপথে বন্ধ করে সুখটান। সকলে আনা হয় থানায়। তারপরে বাড়ির লোককে ডেকে তুলে দেওয়া হয় তাদের হাতে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবরা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৫
Share:

ব্যাগে বই গুছিয়ে, টিফিন বক্স ভরে পিঠে ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ওরা। যেতে যেতে এ কথা ও কথায় ঠিক করে নেয়, আজ ‘ক্লাস কাটতে হবে।’ কী করা হবে ক্লাসে না গিয়ে? ঠিক হয়, সকলে মিলে বসে গাঁজা খাবে।

Advertisement

বিষয়টা একেবারে অজানা নয় কারও কাছে। গাঁজার খুচরো কারবারির ফোন নম্বরও ছিল একজনের কাছে। সেই মতো ফোনে বরাত যায়। পৌঁছে যায় ৩০ টাকার গাঁজা। সিগারেটে ভরে সেই গাঁজা খাওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয় বন-জঙ্গলে ঘেরা জায়গাটা।

স্কুলের ইউনিফর্ম পরা ছেলেদের সেই কাণ্ড চোখে পড়ে স্থানীয় এক বাসিন্দার। খবর যায় পুলিশের কাছে। পুলিশ এসে মাঝপথে বন্ধ করে সুখটান। সকলে আনা হয় থানায়। তারপরে বাড়ির লোককে ডেকে তুলে দেওয়া হয় তাদের হাতে।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে হাবরার পূর্ব ডহরথুবা এলাকার এই ঘটনা অবশ্য তেমন ব্যতিক্রমী নয়, জানাচ্ছেন পুলিশ কর্মীদের একাংশ। স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষক সমাজেরও অনেকের মতে, পড়ুয়াদের মধ্যে নেশার প্রবণতা বাড়ছে।

পূর্ব ডহরথুবার পাকড়াও হওয়া ছাত্রদের মধ্যে চারজন দশম শ্রেণিতে পড়ে। দু’জন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। কলেজের প্রথম বর্ষের দুই পড়ুয়াও ছিল তাদের সঙ্গে। পুলিশকে স্কুলের পড়ুয়ারা জানিয়েছে, এই নিয়ে নাকি দ্বিতীয়বার গাঁজার নেশা করছিল। ভবিষ্যতে আর করবে না। অভিভাবকদের লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার জোগাড়। তাঁদের দাবি, এ সব কিছু জানতেন না। এ বার থেকে সতর্ক থাকবেন। পুলিশের এক প্রবীণ অফিসার অবশ্য বললেন, ‘‘এর আগেও স্কুলের ছেলেদের নেশা করতে দেখে থানায় ডেকে, বাড়ির লোককে হাজির করিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে তাদের নেশা ছাড়ানো যায়নি বলে পরে খবর আসে।’’

হাটথুবা আদর্শ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জয়প্রকাশ কেশরী বলেন, ‘‘এটা খুবই দুঃখের, সন্তানেরা নেশা করে নিজেদের ধ্বংস করছে। আমরা কিছু করতে পারছি না।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগে বাণীপুর এলাকা থেকে নবম শ্রেণির এক পড়ুয়া নিখোঁজ হয়ে যায়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তদন্তে জানা যায়, স্কুলে না গিয়ে ছেলেটি বন্ধুদের সঙ্গে বসে বিড়ি টানছিল। বাড়ির লোকজন তা দেখে ফেলায় বাড়ি থেকে পালায়। হাবরা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিড়ি-সিগারেট-গাঁজার নেশা ধরেছে অনেক পড়ুয়া। নেশার টাকা জোগাড় করতে স্কুলের ফ্যান, কম্পিউটার চুরির ঘটনাও শোনা গিয়েছে। নেশা করতে করতে মোবাইলে অশ্লীল ছবি দেখার কথাও জানতে পেরেছে পুলিশ। এই সব ছেলের দল রাস্তায় মেয়েদের কটূক্তি করে বলেও কানে এসেছে।

হাবরা শহরের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন, শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়ে ছাত্রেদের ব্যাগে মদের বোতল মিলেছিল। এই পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগের।

হাবরা প্রফুল্লনগর বিদ্যামন্দির স্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘পড়ুয়ারা নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে, তার অন্যতম বড় কারণ পরিবারে ভালবাসার অভাব। অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের যতটা সময় দেওয়া উচিত, তা দিতে পারছেন না। স্কুলেও শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে প্রকৃত সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না।’’ সত্যজিৎবাবু মনে করেন, ভালবাসার শাসনটা খুব জরুরি। কিন্তু ছাত্রেরা জেনে গিয়েছে, শিক্ষকেরা তাদের শাসন করতে পারবে না। এতে বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকের অভিজ্ঞতা, কিশোর বয়সে ছাত্রছাত্রীদের শরীর-মনে নানা পরিবর্তন আসে। সে সব কথা তারা পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে না। প্রেম-সম্পর্ক ভাঙার কথাও গোপন করে যায়। এ সবের জেরে মনের উপরে চাপ বাড়ে। সহজ সমাধান হিসাবে নেশার পথ খুঁজে নেয়। পুলিশ জানিয়েছে, গাঁজার পাশাপাশি, নাইট্রোজেন-১০ (এন-টেন) কাশির সিরাপ, ডেনড্রাইটের নেশাও করছে পড়ুয়ারা। হাবরার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ এই সমস্যার সমাধান একা করতে পারবে না। অভিভাবক ও শিক্ষকদের আরও বেশি করে দায়িত্ব নিতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন