ভেদাভেদের অসুরকে বধ করেই সত্তর পেরিয়েছেন দেবী 

সত্তর বছর হয়ে গেল, হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্যোগে চলছে পুজো। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকলে পুজোর আয়োজন করেন। চাঁদা তোলা, প্যান্ডেল তৈরি, প্রতিমা আনা— সবই চলে এক সঙ্গে।

Advertisement

সামসুল হুদা

ভাঙড় শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২৩
Share:

সর্বমঙ্গলা: ভাঙড়ে আমরা সবাই ক্লাব। নিজস্ব চিত্র

জন্মাষ্টমীর দিন থেকে শুরু হয় পরিকল্পনা। ঠাকুরদালানে বসে দফায় দফায় চলে পুজো-বৈঠক। সেখানে হিন্দু-মুসলিম যুবকেরা এক সঙ্গে বসে জরুরি আলোচনা সেরে নেন দুর্গাপুজো নিয়ে।

Advertisement

দীর্ঘ দিন ধরে সম্প্রীতির এমন নজির দেখা যায় জীবনতলা থানার ‘কালিকাতলা বাজার আমরা সবাই সর্বজনীন’-এর দুর্গাপুজোয়।

সত্তর বছর হয়ে গেল, হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্যোগে চলছে পুজো। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকলে পুজোর আয়োজন করেন। চাঁদা তোলা, প্যান্ডেল তৈরি, প্রতিমা আনা— সবই চলে এক সঙ্গে। পুজোর দিনগুলিতে ফুসরত থাকে না মোহম্মদ জাহির, আবু তালেব মোল্লা, ফারুক আব্দুল্লা গাজি, আশিস মোল্লা, সালাউদ্দিন কয়াল, পবন মণ্ডল, নির্মল মণ্ডলদের।

Advertisement

শুধুমাত্র পুজোর দিনগুলিতে নয়, সারা বছরই এ গ্রামে ঐক্যের ছবি স্পষ্ট। বিপদ-আপদেও একে অন্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাভাবিক ভাবেই ইদ-মহরম এবং পুজো-পার্বণেও এ গ্রামের সকলে এক সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন। ইদের দিনে হিন্দুরা মুসলিমদের বাড়িতে যান, আবার পুজো-পার্বণে মুসলিমেরা হিন্দুদের বাড়িতে আমন্ত্রিত থাকেন।

পুজোর এ বারের থিম, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রতিকারে পরিবেশরক্ষা এবং সবুজায়ন। দুর্গামণ্ডপেই পূজিত হন দেবী। বাঁশ, কাঠ, প্লাই, প্লাস্টিক, থার্মোকল— প্যান্ডেলের জন্য সাধারণত অপরিহার্য এ জাতীয় নির্মাণসামগ্রী দূরে সরিয়ে রেখে এ বার মণ্ডপ শ’খানেক গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে। পুজোর পরে ওই সব গাছ এলাকায় রোপণ করা হবে বলে জানিয়েছে পুজো কমিটি।

এলাকার বিধায়ক সওকত মোল্লা বলেন, ‘‘এই পুজো দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করে আসছে।’’ পুজো কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ জাহির বলেন, ‘‘আমাদের বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে এই পুজো দুই সম্প্রদায়ের যৌথ যোগদানে হয়ে আসছে। আমরা ছোটবেলায় আমাদের বাবা-কাকাদের এ পুজোর দায়িত্ব সামলাতে দেখেছি। এখন আমরা করছি। এই ঐতিহ্যকে আমরা বাঁচিয়ে রাখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন