বকখালিতে বিপত্তি

ছায়ায় বসে প্রাণ গেল পর্যটকের

রোদ থেকে বাঁচতে সমুদ্র-পাড়ের ভাঙাচোরা ছাউনির নীচে বসেছিলেন এক পর্যটক। কংক্রিটের সেই ছাউনিই ভেঙে পড়ে প্রাণ গেল তাঁর। শুক্রবার বেলা ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পর্যটনকেন্দ্র বকখালিতে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম পিন্টু হালদার (২৩)। বাড়ি বারুইপুর পশ্চিম মল্লিকপুরে।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ০২:৩১
Share:

ভেঙে যাওয়া শেড। নিজস্ব চিত্র

রোদ থেকে বাঁচতে সমুদ্র-পাড়ের ভাঙাচোরা ছাউনির নীচে বসেছিলেন এক পর্যটক। কংক্রিটের সেই ছাউনিই ভেঙে পড়ে প্রাণ গেল তাঁর।

Advertisement

শুক্রবার বেলা ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পর্যটনকেন্দ্র বকখালিতে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম পিন্টু হালদার (২৩)। বাড়ি বারুইপুর পশ্চিম মল্লিকপুরে।

পেশায় মিষ্টির দোকানের কর্মী পিন্টু দু’দিনের ছুটি পেয়ে এ দিনই সকালে পৌঁছেছিলেন বকখালিতে। তবে দুপুর পর্যন্ত কোনও হোটেল ভাড়া নেননি বলেই জানতে পেরেছে পুলিশ। ঘুরতে ঘুরতে পিন্টু পৌঁছে যান সৈকতে। রোদ্দুর থেকে মাথা বাঁচাতে বনবিবির মন্দিরের কাছাকাছি একটি পুরনো ছাউনির নীচে বসেন। তারপরেই ওই বিপত্তি।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কংক্রিটের চাঙড় ভেঙে পড়ে পিন্টুর বুকে। সামান্য আঁচড় ছাড়া বাইরে থেকে চোটের কোনও লক্ষণ ছিল না। কিন্তু পিন্টু শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। কথাও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফ্রেজারগঞ্জ থানার পুলিশকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়াররা তাঁকে নিয়ে যান বকখালি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পরে দ্বারিকনগর ব্লক হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই মারা যান পিন্টু। মানিব্যাগ ঘেঁটে পরিচয়, যোগাযোগের নম্বর জানা যায়। ফোন করা হয় বাড়িতে। পিন্টুর জামাইবাবু সুমন মণ্ডল বলেন, ‘‘বে়ড়াতে এসে এমন দুর্ঘটনা ঘটবে, ভাবতেই পারছি না। বেঘোরে মারা গেল।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮-০৯ সালে বকখালি সৈকতে এরকম ১০টি বসার শেড তৈরি করেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ। সেগুলির বেশিরভাগই ভেঙে পড়েছে। তিনটি রয়ে গিয়েছিল বিপজ্জনক অবস্থায়। তারই একটি এ দিন ভেঙে মারা গিয়েছেন পিন্টু।

প্রশ্ন উঠছে, মাত্র বছর আটেকের মধ্যে কী ভাবে ভেঙে পড়ছে ছাউনিগুলি? জেলা পরিষদের তৈরি ছাউনির গুণমান নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকেরা।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বাস্তুকারেরা অবশ্য দাবি করছেন, ছাউনিগুলির গোড়া থেকে বালি সরে গিয়ে কোনওটি ভেঙে পড়েছে, কোনওটি হেলে রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে নিয়মিত কেন রক্ষণাবেক্ষণ করা হল না বসার জায়গাগুলির। এ নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করেননি জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখ। তবে বিষয়টি খোঁজ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

বর্তমানে এলাকাটি গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের মধ্যে এসেছে। তারাই বা কেন নজরদারি চালায়নি? কেনই বা বিপজ্জনক ছাউনি ভেঙে দেওয়া হয়নি?

পর্ষদ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, উন্নয়ন পর্ষদের তৈরি নির্মাণ ছাড়া অন্য কোনও নির্মাণের বিষয়টি তারা দেখেন না। পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা অবশ্য দাবি করেছেন, স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতিকে ইতিমধ্যেই অবশিষ্ট ছাউনি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। বকখালি হোটেল মালিক সংগঠনের নেতা অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, ‘‘এমনিতেই বকখালিতে পর্যটকের সংখ্যা কমছে। তার উপরে এ রকম কাণ্ড ঘটলে খুবই মুশকিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement