প্রহৃত: রেবা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
পঁয়ষট্টি বছরের মায়ের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে গ্রেফতার হল ছেলে ও বউমা। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাতে। সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের হরিনগর গ্রামে।
পুলিশ জানিয়েছে, মা রেবা মণ্ডল মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে থাকতেন। মেয়েরা মাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে এলে মাকে রাখতে অস্বীকার করে ছেলে। প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করলে আলোচনাসভাতেই মায়ের উপর চড়াও হয় ছেলে-বউমা। তাঁকে ও দুই মেয়েকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলে ও বউমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিনগর গ্রামের বাসিন্দা রেবাদেবীর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁর স্বামী অতুলচন্দ্র এক পশুচিকিৎসকের সহকারী ছিলেন। তাঁরা ছেলে-বউমার কাছেই থাকতেন। রেবাদেবীর ছেলে অশোকের স্থানীয় সিন্দ্রাণী বাজারে একটি জামাকাপড়ের দোকান আছে। বছর দু’য়েক আগে অতুলবাবুর মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই ছেলে ও বউমা রেবাদেবীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে বলে অভিযোগ। এক পড়শি বলেন, ‘‘প্রায়ই বাড়িতে ঝগড়া-অশান্তি লেগে থাকত। অশোক ও ওর বউ মায়ের উপর অত্যাচার করত।’’ মাস চারেক আগে রেবাদেবী অসুস্থ হয়ে বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি হন। সুস্থ হওয়ার পর অশোক তাঁকে আনতে যায়নি। রেবাদেবী কখনও বনগাঁর ট্যাংরা গ্রামে বড়মেয়ে সুপ্রিয়ার বাড়ি, কখনও নদিয়ার সিলিন্দা গ্রামে মেজমেয়ে সুপর্ণার বাড়ি গিয়ে থাকতে শুরু করেন। মঙ্গলবার মেজ মেয়ে সুপর্ণা মণ্ডল ও ছোটমেয়ে অপর্ণা বিশ্বাস তাঁকে বাড়িতে রাখতে এলে রেবাদেবীকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তিনি গ্রামেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটান। সমস্যা মেটানোর জন্য বুধবার সন্ধ্যায় কয়েকজন আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের নিয়ে গিয়ে আলোচনায় বসেন তাঁরা। সেখানেই অশোক ও তার বউ তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ।
আলোচনাসভায় উপস্থিত রেবাদেবীর দেওর বিভাস বলেন, ‘‘অশোক ও তার বউ বউদিকে মারধর করছিল। ঠেকাতে গিয়ে আমিও আহত হই। বউদিকে নিয়ে বাগদা গ্রামীণ হাসপাতালে যাই। নিজেরও চিকিৎসা করাই।’’
রাতেই বাগদা থানায় ছেলে ও বউমার নামে অভিযোগ জানিয়েছেন রেবাদেবী। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবার সকালে অশোক মণ্ডল ও তার স্ত্রী রিতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ দিন তাদের বনগাঁ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
রেবাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে-বউমা আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়। আগে আমাকে হাসপাতালে ফেলে চলে গিয়েছিল। এ বার মারধর করল। ওদের শাস্তি হওয়া উচিত।’’