কানে আঙুল দিয়েও এড়ানো যাচ্ছে না এয়ার হর্নের দাপট

মোটরবাইকে স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক যুবক। হঠাৎ পিছন থেকে একটি বাস জোরে হর্ন বাজিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আচমকা আওয়াজে থতমত খেয়ে বাইক নিয়ে উল্টে পড়লেন ওই যুবক।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:০৭
Share:

অঙ্কন: নির্মাল্য প্রামাণিক।

মোটরবাইকে স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক যুবক। হঠাৎ পিছন থেকে একটি বাস জোরে হর্ন বাজিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আচমকা আওয়াজে থতমত খেয়ে বাইক নিয়ে উল্টে পড়লেন ওই যুবক।

Advertisement

এয়ার হর্নের দাপটে এমন ঘটনা ঘটছে প্রায়শই। ভ্যানে বা অন্য ছোট গাড়ি পথে যাতায়াত করার সময়েও এয়ার হর্নের শব্দে মানুষকে কান চাপা দিতে হচ্ছে।

উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা, বনগাঁ, গাইঘাটা, গোপালনগর, বাগদা, অশোকনগর, আমডাঙা, স্বরূপনগর, বসিরহাট সর্বত্রই এয়ার হর্নের দাপট চোখে পড়বে। মানুষের অভিজ্ঞতা, পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর না হওয়ার কারণেই এমনটা ঘটছে। জেলা পরিবহণ দফতরের অধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘এয়ার হর্ন এখন বেআইনি। তবে পরিবহণ দফতর থেকে প্রায়ই এয়ার হর্নের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। আইনগত পদক্ষেপও করা হয়।’’ জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘এয়ার হর্নের দাপট কমাতে গোটা জেলা জুড়েই কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

Advertisement

এই হর্নের দাপটে স্কুলগুলিরও সমস্যা হচ্ছে। পড়ুয়াদের পড়া শুনতে অসুবিধা হয়। শুধু তাই নয় মাঝে মধ্যেই পড়ুয়ারা চমকে ওঠে। এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এয়ার হর্নের শব্দে পঠন পাঠনে খুবই অসুবিধা হয়। দ্রুত ওই হর্ন বাজানো বন্ধ করা উচিত।’’ গোপালনগরের বিভিন্ন সড়কে এয়ার হর্নের দাপট এতটাই বেশি যে কয়েক বছর আগে প্রাক্তন সৈনিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলন হয়েছিল। পথ অবরোধ হয়েছিল। সে সময়ে বিভিন্ন গাড়ি থেকে ১৭০টি এয়ার হর্ন খুলে তাঁরা পুলিশের কাছে জমাও দিয়েছিলেন। গোপালনগরের প্রাক্তন সৈনিক সংগঠনের সম্পাদক প্রশান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের ওই আন্দোলনের পরে বছর দু’য়েক এয়ার হর্নের দাপট বন্ধ ছিল। এখন ফের তা বেড়েছে। প্রশাসনের উচিত পদক্ষেপ করা।’’

শুধু পথচারীই নন, সড়কের পাশের বাড়িগুলিও সম্যসায় দিন কাটাচ্ছে। বনগাঁর এক প্রবীণ জানান, রাতে এমন হর্নের শব্দ হয় যে ঘুম ভেঙে যায়। এ ভাবে ঘুম ভাঙাতে বুক ধড়ফড় করে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যাঁদের হার্টের সমস্যা আছে, তাঁদের পক্ষে ওই শব্দ যথেষ্ট বিপজ্জনক।

আরও পড়ুন: তুষার যুগের ম্যামথ ফিরে আসছে আবার!

বনগাঁ থেকে বারাসত ঢোকার আগে পর্যন্তই এয়ার হর্নের দাপট চলে। বারাসত থেকে কলকাতার দিকে হর্নের আওয়াজ তেমন শোনা যায় না।

কারণ ওই সব এলাকায় পুলিশের নজরদারি অনেক বেশি। হাবরা থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় এয়ার হর্নের সমস্যা মেটাতে পুরপ্রধান নীলিমেশ দাসকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের জন্য অনুরোধ করেন। নীলিমেশবাবু বলেন, ‘‘শীঘ্রই বৈঠক করে এয়ার হর্ন যথেচ্ছ ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হবে।’’ মৈনাকবাবু জানিয়েছেন, প্রথমে বৈঠকে করে যান চালকদের সচেতন করা হবে। তাতে কাজ না হলে আইনত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এয়ার হর্ন খুলতে হলে ওই বিষয়ে পারদর্শী লোকের প্রয়োজন। যা পুলিশের কাছে একটা সমস্যার বিষয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন