স্কুলছুটদের বইমুখো করতে উদ্যোগ

এক কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে মিলে এই শিশুদের পড়াশোনার মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এ কাজের জন্য প্রাথমিক ভাবে জয়নগরের প্রত্যন্ত এলাকার ৬টি গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তৈরি হয়েছে ৬টি বিশেষ স্কুল। স্কুলছুটদের খুঁজে এনে ভর্তি করা হচ্ছে সেই স্কুলে। বিশেষ কোর্সের মাধ্যমে পড়াশোনায় তাদের আগ্রহ ফেরানোর চেষ্টা চলছে।

Advertisement

সমীরণ দাস

জয়নগর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫২
Share:

তালিম: জয়নগরে। ছবি তুলেছেন শশাঙ্ক মণ্ডল

বছর দু’য়েক আগে প্রথমিক স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল আরিফ। কোনও রকমে এক বছর স্কুল করার পরে আর স্কুলমুখো হয়নি। আরিফের পাশের পাড়ার সোমেনের গল্পটাও অনেকটা এ রকম। দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় সে।

Advertisement

আজও রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এ রকম কত আরিফ, সোমেনের ছড়াছড়ি। এদের পাশাপাশি কখনও স্কুলের মুখ দেখেনি, এ রকম শিশুর সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

এক কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে মিলে এই শিশুদের পড়াশোনার মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এ কাজের জন্য প্রাথমিক ভাবে জয়নগরের প্রত্যন্ত এলাকার ৬টি গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তৈরি হয়েছে ৬টি বিশেষ স্কুল। স্কুলছুটদের খুঁজে এনে ভর্তি করা হচ্ছে সেই স্কুলে। বিশেষ কোর্সের মাধ্যমে পড়াশোনায় তাদের আগ্রহ ফেরানোর চেষ্টা চলছে। ৬টি গ্রামের প্রায় সাড়ে তিনশো শিশু এই মুহূর্তে নিয়মিত ক্লাস করছে এই সব স্কুলে। আগামী শিক্ষাবর্ষে এদের প্রত্যেককেই স্কুলে ভর্তি করা যাবে বলে আশাবাদী সংগঠনের লোকজন। স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরানোর বিশেষ এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আলোর দিশা’।

Advertisement

শিশুদের পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ানোর কাজটা এখানে হচ্ছে অত্যন্ত আধুনিক উপায়ে। বিভিন্ন মজাদার অ্যাক্টিভিটি, টিচিং মেটেরিয়ালের মাধ্যমে। পাশাপাশি, বয়স অনুযায়ী যে শিশু যে ক্লাসের উপযুক্ত, তাকে সেই পাঠ্যক্রম অনুযায়ী তালিম দেওয়া হচ্ছে। মূলত স্থানীয় মহিলাদের দিয়েই চালানো হচ্ছে স্কুলগুলি। সে জন্য ওই মহিলাদের ছ’মাসের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সংস্থাটি। সংস্থার তরফে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা নীলাংশু গায়েন বলেন, ‘‘আমাদের বিশ্বাস, শিশুদের আগ্রহটা ঠিকঠাক তৈরি করে দিতে পারলেই ওরা স্কুলে ফিরবে। সেই কাজটাই আমরা করছি। আমরা নিশ্চিত, এই মুহূর্তে যে সাড়ে তিনশো বাচ্চা আমাদের কাছে আসছে, তারা প্রত্যেকেই আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুলে যাবে।’’ তিনি স্থানীয় সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলকে এ জন্য ধন্যবাদ দেন। জানান, ওঁর চেষ্টা ছাড়া এটা হত না। স্থানীয় পঞ্চায়েতও সাহায্য করছে বলে জানালেন নীলাংশু।

জয়নগরকে মডেল করে এই প্রকল্পকে পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে জানান তিনি। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি জেলা ও প্রতিবেশী আরও পাঁচটি রাজ্যে এই প্রকল্প গড়ে তোলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন