কোথাও যেতে সময় লাগে দু’ঘণ্টা। কোথাও তারও বেশি। তবু এমনই সব দুর্গম এলাকায় সিট পড়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের। পৌঁছতে সময় লাগছে বেশি। এই পরিস্থিতিতে নাজেহাল কাকদ্বীপের বহু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
কাকদ্বীপের এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক অঞ্জন চৌধুরী নিজেও শিক্ষক। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছেলের সিট পড়েছে কালীনগর দ্বারিকানাথ ইন্সটিটিউশনে। সেখানে যেতে গিয়ে প্রথম দিনই প্রচুর যানজটের মুখে পড়ি।’’
সুন্দরবন আদর্শ বিদ্যামন্দিরে প্রায় ৫০০ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে। আরও অত জনের বসার ব্যবস্থা করা যেত এই স্কুলে, জানালেন সেখানকার প্রধানশিক্ষক শ্যামসুন্দর জানা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের স্কুলে সিট পড়ায় অন্য ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। আরও অনেক ছাত্রকে এখানে দেওয়া যেত। তা না করে আমাদের ছেলেদেরই সিট পড়ল দূরে।’’ একেবারে জাতীয় সড়কের উপর এই স্কুলটি। ছাত্রছাত্রীদের অনেকটাই সুবিধা হত এরকমই মনে করছেন অনেক অভিভাবকও।
অভিভাবকদের অনেকেরই মতে, একে তো পরীক্ষার সময়ে টেনশনে থাকে পড়ুয়ারা। বাড়ির লোকেরও উদ্বেগ কম নয়। যাতায়াত যদি সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়, তা হলে চিন্তা বাড়ে। অনেক অভিভাবক জানালেন, অচেনা জায়গায় কোথায় সিট পড়েছে, তা পরীক্ষার আগে গিয়ে দেখে এসেছেন। তাতেও বাস, ট্রেকার, অটো ধরে, নৌকোয় নদী পেরিয়ে যাওয়ার চিন্তা কমেনি।
জাতীয় সড়কের উপরেই মধুসূদনপুরের বড় স্কুল সীতারামপুর হাই। গত বছর পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছিল। কিন্তু এ বার সেখানে উচ্চমাধ্যমিকের আসন পড়েনি। এই স্কুলেও অন্তত ৫০০ পরীক্ষার্থীর বসার ব্যবস্থা করা যেত। শহরের মধ্যে এ রকম আরও স্কুল রয়েছে, যেখানে আসন সংখ্যা আরও বাড়ালেও সমস্যা ছিল না। তা হলে কেন দুর্গম এলাকার স্কুলগুলিতে উচ্চমাধ্যমিকের আয়োজন করা হল?
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নীতি অনুসারে, সব থেকে কাছের এবং সুবিধাজনক স্কুলেই পরীক্ষার সিট ফেলা উচিত। কিন্তু তা কাকদ্বীপে এ বার হয়নি।
কেন?
সংসদের দক্ষিণ ২৪ পরগনা যুগ্ম আহ্বায়ক অজিত নায়েকের দাবি, গত বছর স্কুলগুলিতে অনেক ছাত্র বেশি হয়ে যাচ্ছিল। অন্যান্য স্কুল থেকে শিক্ষক নিতে হয়েছিল। তাই এ বার কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।’’
কিন্তু কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা না দেখে স্কুলের স্বার্থ দেখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে শিক্ষক মহলে। কারণ সেন্টার ফি’র বাইরে আয়োজক স্কুলগুলি পরিকাঠোমো অনুসারে একটি মোটা অঙ্কের টাকা সংসদের থেকে পায়। যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন সংসদের প্রতিনিধিরা।