naihati

আতঙ্ক কাটেনি স্কুলপড়ুয়াদের

শুক্রবার যদিও নতুন করে কোনও বিস্ফোরণ হয়নি। তবে এলাকায় আতঙ্কটা রয়েছে পুরোমাত্রায়।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল 

নৈহাটি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২১
Share:

উৎকণ্ঠা: বৃহস্পতিবার বিকট শব্দে ফেটেছিল স্কুলের জানলার কাচ। কেমন আছে স্কুল—তা দেখতেই শুক্রবার স্কুলে পড়ুয়ারা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সবুজ ঘাসের মস্ত মাঠটা খাঁ খাঁ করছে। অথচ বৃহস্পতিবারের দুপুরে এই সময়ে কচিকাঁচাদের ভিড়ে গমগম করছিল নৈহাটি গৌরীপুরের বিদ্যাবিকাশ স্কুলের এই মাঠটি। তখনই আচমকা বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছিল স্কুলবাড়িটা। ঝনঝনিয়ে ভেঙে পড়েছিল জানলার কাচ।

Advertisement

শুক্রবার স্কুলের ভিতর অফিস রুমের সিলিংটা ঝুলছে। ২২০০ পড়ুয়ার স্কুলে শুক্রবার এসেছিল মাত্র ৫৬ জন। ফলে স্কুল আর চালানো যায়নি। এ দিনের মতো ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। অভিভাবকেরা জানান, এখনও আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা। এ দিন আর ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভরসা পাননি। শুক্রবার যদিও নতুন করে কোনও বিস্ফোরণ হয়নি। তবে এলাকায় আতঙ্কটা রয়েছে পুরোমাত্রায়।

বৃহস্পতিবার গঙ্গার পাড়ে যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছিল, সেখান থেকে বিদ্যাবিকাশ স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের পাঁচিলটি ১০০ মিটারেরও কম দূরত্বে পড়ে। ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক রঞ্জিতকুমার সাউ বলেন, “তখন টিফিন চলছিল। সেই সময় আচমকাই কেঁপে ওঠে স্কুলের দু’টি বিভাগের বাড়ি। সঙ্গে বিকট শব্দ। তার পর মনে হল যেন গরম হাওয়া চলছে। চারদিকে বাচ্চারা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। আমরা কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণের মধ্যে বারুদে ভরে গেল স্কুলের মাঠ।”

Advertisement

ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বিশাল যাদব বলে, “টিফিন খাওয়ার পরে আমরা সবাই খেলছিলাম। কিছুই বুঝতে পারলাম না, সব দুলতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে কাচ ভাঙার শব্দ। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ছোটদের অনেকেই কাঁদতে শুরু করে দিল। ভয়ে আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। ভয় হচ্ছিল স্কুলবাড়িটা ভেঙে পড়বে না তো!” শুক্রবার স্কুলে আসেনি বিশাল। তবে বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে স্কুল দেখতে এসেছিল। সে জানায়, মা তাঁকে স্কুলে আসতে দেননি।

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র প্রথম যাদবের আতঙ্ক কাটেনি বিস্ফোরণের এক দিন পরেও। এ দিন দুপুরে বাড়িতে শুয়েছিল সে। ঘটনার সময় করিডরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল। স্কুলের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে তার সামনে। তার পরেই কাঁদতে শুরু করে বাচ্চারা। প্রথম বলে, “স্কুলবাড়িটা দুলেই চলেছে। মনে হচ্ছে এ যেন আর থামবে না। কতক্ষণ জানি না। এক সময় মনে হল দুলুনি থেমেছে। তখন বাইরে খুব চেঁচামেচি হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরে স্যারেরা ছুটি দিয়ে দিলেন।”

গঙ্গার ধারে কোথায় বিস্ফোরণ হয়েছিল, তা দেখতে এসেছিলেন ঊর্মি সরকার। তাঁর ছেলে বিদ্যাবিকাশ স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি বললেন, “আসার সময় স্কুলটা দেখে এলাম। আমার ছেলে ওই শব্দে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আজও ওর ভয় কাটেনি। স্কুলের অনেক জায়গা ভেঙে পড়েছে। ওগুলো যে পড়ুয়াদের মাথায় ভেঙে পড়বে না, তার নিশ্চয়তা কী? সেই জন্য ছেলেকে স্কুলে পাঠানোর সাহস পাইনি।” স্কুলকে বাঁ দিকে রেখে কিছুটা এগোলেই গঙ্গার পাড়। এক সময় সেটা ছিল গৌরীপুর জুট মিলের জায়গা। এখন পাঁচিল ধসে পুরো খোলা ময়দান। সেখানে যেন মেলা বসেছে শুক্রবার সকাল থেকে। গঙ্গার ধারে ওখানেই বিস্ফোরণ হয়েছিল। দেখা গেল, স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে শুরু করে, অফিসের কর্মী, ব্যবসায়ী সকলেই একবার ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে। সকাল থেকে সেখনে সাইকেল-বাইক আর টোটোর সারি। কিন্তু কাছে যাওয়ার উপায় নেই ঘটনাস্থলের অনেক আগেই গার্ড রেল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। কিন্তু অতি উৎসাহী জনতাকে আটকানো কী মুখের কথা? তাদের সামলাতে হিমসিম খেতে হল পুলিশকে। কেউ কেউ লুকিয়ে গঙ্গার পাড় দিয়ে বিস্ফোরণস্থলে পৌঁছনোর চেষ্টা করলেন। কার্যত লুকোচুরি খেলা চলল পুলিশের সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন