তন্ত্রমতেই পূজা পান মহাশ্মশানের কৃষ্ণকালী

পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে কালীপুজোর রাতেই কৃষ্ণকালীর পুজো হয় তন্ত্রমতে। বহু বছর ধরে ওই প্রথা চলে আসচ্ছে মগরাহাটের মুলটি হংসবেড়িয়া মহাশ্মশানে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মগরাহাট শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২২
Share:

পুজিতা হন এই মূর্তি। নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে কালীপুজোর রাতেই কৃষ্ণকালীর পুজো হয় তন্ত্রমতে। বহু বছর ধরে ওই প্রথা চলে আসচ্ছে মগরাহাটের মুলটি হংসবেড়িয়া মহাশ্মশানে।

Advertisement

ওই কৃষ্ণকালীর পুজো শুরু নিয়ে শোনা যায় নানা কাহিনী। কথিত আছে, বহু বছর আগে ওই এলাকায় প্রায় কয়েক বিঘা জুড়ে একটি প্রাচীন বটগাছ ছিল। আশেপাশে তখন কোনও জনপদ গড়ে ওঠেনি। ওই বটবৃক্ষের পাশ দিয়ে বয়ে চলা গঙ্গার পাড়ে শবদাহের কাজ হতো অনেক বছর ধরেই।

স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বরূপা নন্দ কলকাতা থেকে পালিয়ে শ্মশানের ওই প্রাচীন গাছের কোটরে সাধু বেশে বসবাস শুরু করেন। প্রচুর শকুন ও শিয়ালের আস্তানাও ছিল ওই প্রাচীন গাছে। পরে পাশেই ফাঁকা জমিতে ছিটে বেড়ার ঘরে থাকতেন স্বরূপা নন্দ। তিনি স্বপ্নে দেখেন, কৃষ্ণকালীর পুজো করলে সকলেরই মঙ্গল হবে। সেই থেকেই শুরু ওই হয় কালীপুজোর রাতে কৃষ্ণকালীর পুজো।

Advertisement

বর্তমানে অবশ্য সেই ছিটে বেড়ার ঘর নেই। কৃষ্ণকালীর সুন্দর মন্দির তৈরি হয়েছে। মন্দিরের মধ্যে কালো রঙের প্রায় চার ফুট উচ্চতার দাঁড়ানো পাথরের কৃষ্ণকালী। বাঁ হাতে শোল মাছ। অন্য হাতে, বরাভয় ও কারণ পাত্র। পৌরাণিক মতে, শোলমাছ জীবনের প্রতীক। আর কারণপাত্র অর্থাৎ মদ, জীবনের উৎস। দেবীর সামনে বড় যজ্ঞের ব্যবস্থা হয়।

এলাকার এক প্রবীণ জানালেন, এই কৃষ্ণকালী পুজোর দিন-রাতে এক কড়া খিচুড়ি তৈরি হতো শুধু শিয়ালদের জন্য। সাধকের এক ডাকে পালে পালে শিয়াল জড়ো হয়ে খিচুড়ি খেত। তারপরেই অন্যদের জন্য খিচুড়ি বিতরণের রীতি ছিল।

এলাকার আর এক প্রবীণ সত্য দাস বললেন, ‘‘আমরা ছোটবেলায় এই এলাকায় সন্ধ্যার পরে এলে গা ছমছম করত। প্রায় ফাঁকা এলাকা, আলোও ছিল না। তবে কৃষ্ণকালী পুজোয় এক সময়ে হ্যাজাকের আলো জ্বলত। দূরদূরান্ত থেকে পুজো দেখতে আসতেন অনেকে। সক‌লেই পেট ভরে খিচুড়ি খেয়ে যেতেন।

দেবীর পুজারী, কলকাতার বাসিন্দা ফটিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে পুজো করছি। পুজোয় তেমন কোনও উপাচার লাগে না। তন্ত্রমতেই পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে হোম ও পুজো চলে সারা রাত ধরে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন