বৈঠক: বোঝানো হচ্ছে রুপিয়ানের পরিবারকে। নিজস্ব চিত্র
বন্ধুর কাছে কেঁদে ফেলেছিল মেয়েটি। বলেছিল, ‘‘যে ভাবে হোক, আমার বিয়েটা আটকা।’’
বন্ধুরা সাতপাঁচ ভেবে যোগাযোগ করে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে। শেষমেশ নবম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে আটকানো গিয়েছে।
ঘটনাটি মথুরাপুর ১ ব্লকের মানিকতলার। বছর পনেরোর রুপিয়ান ঘরামির বিয়ের ঠিক করেছিলেন বাবা-মা। কিন্তু তাতে আপত্তি ছিল মেয়ের। সে আরও পড়াশোনা করতে চায়। রবিবার ছিল পাকা দেখার দিন।
এ দিন সকালে রুপিয়ানের এক বান্ধবী কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতিকে ফোন করে। বলে, যে ভাবে হোক, বিয়ে আটকান। সব শুনে প্রধান শিক্ষকেরও মাথায় হাত। তিনি জানেন, রুপিয়ান তাঁর স্কুলের কৃতী ছাত্রী। স্কুলে উপস্থিতির হারও ভাল। এমন মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুনে দিশাহারা চন্দনবাবু অনেক ভেবেচিন্তে যোগাযোগ করেন পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে।
পুলিশ-প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে চন্দনবাবু নিজেও হাজির হন রুপিয়ানের বাড়িতে। সেখানে তখন উৎসবের মেজাজ। পুলিশ-প্রশাসনের লোকজন দেখে হকচকিয়ে যান মেয়ের বাবা রূপচাঁদ। তিনি আনাজপাতি বিক্রি করেন। প্রধান শিক্ষক ও পুলিশ রূপিয়ানকে কাছে ডাকেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে বড় রুপিয়ান। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিয়েতে সে রাজি কিনা। হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলে ওই কিশোরী। বলে, ‘‘স্যার আপনারা আমার পরিবারের লোকজনকে বোঝান। আমি অনেক পড়াশোনা করতে চাই। বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। বাবা-মায়ের পাশে থাকতে চাই। এ কথাটা কিছুতেই কাউকে বোঝাতে পারছি না।’’
প্রধান শিক্ষক ও পুলিশ রূপচাঁদ ও তাঁর স্ত্রী ফজিলাকে বোঝান, নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়া আইনের চোখে অপরাধ। নানা সমস্যা হতে পারে এই বিয়েতে। সকলে বলেন, মেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেলে কন্যাশ্রীর টাকা পাবে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারকে সাহায্য করতে পারবে।
সব শুনে বাবা-মা দু’জনে জানিয়ে দেন, মেয়ের বিয়ে এখনই দেবেন না তাঁরা। পড়াশোনাই করুক সে। রূপচাঁদ বলেন, ‘‘আসলে আমরা খুব গরিব। সম্বন্ধ আসায় বিয়ে দিয়ে দেবো ভেবেছিলাম। তবে ছোট বয়সে বিয়ে দেওয়া যায় না, সেটা আমাদের জানা ছিল না।’’ চন্দনবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের বলে এসেছি, পড়াশোনার জন্য যা খরচ লাগবে, তা আমি দেবো। স্কুলের ছাত্রী নিবাসে রেখে পড়াশোনা করতে চাইলে সমস্ত সহযোগিতা পাবে ও।’’