টাকাটা এখন বড্ড দরকার, বলছেন বাসন্তী

অর্থলগ্নি সংস্থার চক্করে পড়ে বহু টাকা খুইয়েছেন অনেকে। কেউ আবার নিজেরা এজেন্ট হয়ে বাজার থেকে টাকা তুলেছেন দেদার। নিজেরাও টাকা ঢেলেছেন সংস্থায়। আরও তাড়াতাড়ি আরও বেশি মুনাফার আশায় তাঁদের সকলেরই ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছেন। কেউ এখনও অথৈ জলে। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।অর্থলগ্নি সংস্থার চক্করে পড়ে বহু টাকা খুইয়েছেন অনেকে। কেউ আবার নিজেরা এজেন্ট হয়ে বাজার থেকে টাকা তুলেছেন দেদার। নিজেরাও টাকা ঢেলেছেন সংস্থায়। আরও তাড়াতাড়ি আরও বেশি মুনাফার আশায় তাঁদের সকলেরই ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছেন। কেউ এখনও অথৈ জলে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবড়া শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৬
Share:

চিন্তায়: বাড়ির সামনে বাসন্তী বিশ্বাস। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাননি মছলন্দপুরের বাসিন্দা বাসন্তী বিশ্বাস। তবে ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করেছিলেন তিনি। পরিচারিকার কাজ করে তিলতিল করে টাকা জমাচ্ছিলেন। কিন্তু এখন তাঁর হাত বেমালুম খালি।

Advertisement

রোজগারের ১০ হাজার টাকা তিনি রেখেছিলেন অর্থলগ্নি সংস্থা সারদায়। এজেন্ট পরিচিত বলে অল্প সময়ে টাকা দ্বিগুণ হবে এই আশায় লগ্নি করেছিলেন স্বামীবিচ্ছিন্না বছর আটত্রিশের মহিলা। মেয়ে এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে। ছেলেও স্কুল পড়ুয়া। সুদ দূরের কথা, আসল টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন তিনি।

ইদানীং পরিচারিকার কাজ ছেড়ে ঢাক বাজান বাসন্তী। বললেন, ‘‘মেয়ের লেখাপড়ার খরচ, বিয়ের খরচ আছে। টাকাটা খুব দরকার জানেন।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সরকার কি কিছুই করতে পারে না?’’ হাবড়া-সহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরলে বোঝা যায়, বেআইনি সংস্থায় অর্থলগ্নি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। স্থানীয় মানুষজন জানাচ্ছেন, বছর আট-দশ আগে সারদা, রোজভ্যালি, অ্যালকেমিস্টের পাশাপাশি ব্যাঙের ছাতার মতো বহু ভুয়ো সংস্থা গড়ে উঠেছিল। দিনমজুর, খেতমজুর, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবীরাও মোটা লাভের আশায় এই সব সংস্থায় লগ্নি করেছিলেন। যাঁদের অনেকেই বহু টাকা খুইয়েছেন। বেশ কিছু দিন আগে হাবড়ার বিশ্বাসহাটি এলাকার যুবক শেখর দেবনাথ, তাঁর মেয়ে ও স্ত্রীকে খুন করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশের দাবি ছিল, ঋণের ফাঁদে পড়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন শেখর। এলাকার বাসিন্দারা জানান, চিটফান্ডে টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হন শেখর।

Advertisement

এক আসবাব ব্যবসায়ী এমনই এক বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় আড়াই লক্ষ টাকা রেখেছিলেন। পুরোটাই খুইয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই চিটফান্ডের যারা কর্তা ছিল, তারা টাকা নিয়ে সরে পড়েছে। শুধু আমরাই সর্বস্বান্ত সর্বস্বান্ত হলাম। পুলিশ ওদের ধরতেই পারল না।’’

শিবপদ দাস ছিলেন পেশায় ঢাকি। মোটা রোজগারের আশায় সারদার এজেন্ট হয়েছিলেন। জানালেন, প্রায় চল্লিশ জনের কাছ থেকে টাকা তুলেছিলেন। তারপরেই সারদার গণেশ উল্টোয়। তিনি নিজেও বেশ কিছু টাকা রেখেছিলেন। সবটাই জলে গিয়েছে। সারদা ঝাঁপ বন্ধ করার পরে আমানতকারীরা তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়েছিলেন। শিবপদ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার প্রায় ২৮ জনের টাকা ফিরিয়ে দিয়েছিল। নিজের ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দেনা শুধেছি। জনা দ’শেক মানুষ এখনও টাকা ফেরত পাননি।’’

রবিনবাবুর হাট এলাকার প্রণবকুমার দে সানপ্ল্যান্ট নামে একটি ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট ছিলেন। হাবড়া শহরে ছিল তাদের অফিস। তিনি মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন। আশ্চর্যের কথা, সারদা-কাণ্ডের পরেও বন্ধ হয়নি সানপ্ল্যান্ট।

তারপরেও এলাকার বাসিন্দারা ওই সংস্থায় টাকা রেখেছেন। তবে ২০১৫ সালে সংস্থাটি পাততাড়ি গোটায়। আমানতকারীরা টাকা না পেয়ে প্রণবের উপরে চড়াও হন। প্রণবের বাইকটি নিয়ে যান। প্রণব বলেন, ‘‘তিন বছর ধরে মানসিক নির্যাতন সহ্য করেছি। রাস্তায় বেরোতে পারতাম না। গালিগালাজ খেতে হত। বোঝাতে পারতাম না, আমাদের কোনও দোষ নেই।’’ তবে ইদানীং পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানালেন তিনি।

বেশ কিছু এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রথম দিকে গ্রাহকেরা ক্ষিপ্ত থাকলেও এখন তাঁরাও বুঝতে পেরেছেন, এজেন্টদের কিছু করার নেই। কারণ, তাঁরা নিজেরাও প্রতারিত।এজেন্ট থেকে আমানতকারী প্রত্যেকেই চাইছেন, তদন্তের নামে ঢিলেমি বন্ধ হোক। বন্ধ হোক রাজনীতিও। বরং কী ভাবে আমানতকারীরা টাকা ফেরত পাবেন, দ্রুত সেই সমাধান সূত্র খুঁজে বের করুক সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন