সংযোগ: টানা হচ্ছে তার। নিজস্ব চিত্র
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ি বাড়ি ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল পৌঁচ্ছে গিয়েছে। কিন্তু সে সবের স্বাদ থেকে দূরে রায়দিঘির বকুলতলা গ্রাম। সন্ধ্যার পরে ভরসা এই গ্রামের ভরসা ছিল কুপির আলো। শুধু তাই নয়, ছোটখাট অনুষ্ঠান করতে গেলে জেনারেটর ভাড়া করা ছাড়া উপায় ছিল না। মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য পাঁচ টাকা নিয়ে ছুটতে হতো পাশের গ্রামে।
এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে বকুলতলাবাসীকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক বা দু’বছর নয়। টানা ২৭ বছর। মঙ্গলবার বিদ্যুৎ সংযোগ পেল রায়দিঘির মথুরাপুর-২ ব্লকের এই গ্রামটি। বিদ্যুৎ পৌঁছতেই আনন্দে মেতে উঠল সকলেই। আবির খেলা থেকে শুরু করে মিষ্টি বিতরণ চলল রাত পর্যন্ত।
কিন্তু এত বছর অপেক্ষা করতে হল কেন?
এই গ্রামের জনসংখ্যা সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি। এই সময়ের মধ্যে পাশের গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু এই গ্রামে দু’টি খুঁটি বসানোর জায়গা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। তার ফলে এত দিন বিদ্যুৎ সংযোগ আসেনি। দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে বিদ্যুৎ দেওয়ার দাবিতে গড়ে তোলা হয় ‘গ্রাম কমিটি’। সংযোগের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের জানানোর পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে আসছিল ওই কমিটি। প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মিলছিল না। এ বছর ১৪মে ওই এলাকায় সখেরহাট মোড়ে কয়েকশো বাসিন্দা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা এসে যতক্ষণ না এই গ্রামের সমস্যা মেটাচ্ছেন, ততক্ষণ তাঁরা অবরোধ তুলবেন না। কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভ চলে। ওই দিনই প্রশাসনের কর্তারা এসে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
আশ্বাসের ঠিক তিন দিন পরেই গ্রামে যান মথুরাপুর-২ ব্লকের বিডিও স্বাতী চক্রবর্তী, ওসি অনিন্দ্য মুখ্যোপাধ্যায়। মানুষের সমস্যার কথা শোনেন। কী কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না, গ্রাম ঘুরে দেখেনও। পরে বিডিও যোগাযোগ করেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে। আর ২৭ বছরে সমস্যা মাত্র কয়েক দিনেই মিটে গেল।
গ্রাম্য কমিটির সদস্য হাবিবুল্লা দপ্তরি, তোয়েব বৈদ্যরা বলেন, ‘‘এতদিন পরে মনে হচ্ছে সভ্যযুগে পা দিলাম। গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না বলে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে গেলে অন্য গ্রাম থেকে আসা মানুষের কাছে কম অপমান সহ্য করতে হয়নি। বিদ্যুৎ না থাকায় শুভ অনুষ্ঠান বাতিলও হয়েছে।’’ বকুলতলা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিলকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘খুব ভাল লাগছে। পড়ুয়ারা গরমের হাত থেকে রেহাই পেল।’’
কী বলছে বিদ্যুৎ দফতর? বারুইপুর ডিভিশন্যাল ম্যানেজার সিদ্ধেশ্বর দাস বলেন, ‘‘জমি জটের সমস্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে খুঁটি বসানো যাচ্ছিল না। বিডিও এবং ওসির তৎপতার সেই কাজ সম্ভব হয়েছে।’’ এই কাজ করে দিতে পেরে মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন বিডিও এবং ওসি। তাঁদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, ‘‘এটা আমাদের কাজ। মানুষের দাঁড়ানোটা আমাদের কর্তব্য।’’