তৃণমূলের দখলে রয়েছে পুরসভা। আর সেই পুরসভায় অস্থায়ী কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি, শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ-সহ বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য মিছিল করলেন ওই দলেরই পুর কর্মচারী সংগঠনের সদস্যেরা! অভিযোগ তুললেন পুর-কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবেরও। মঙ্গলবার দুপুরে কামারহাটি পুরসভার ঘটনা।
এ দিন দুপুর ২টো থেকে আড়াইটে পর্যন্ত বিটি রোডে পুরসভার তিন তলা ভবনে ঘুরে ঘুরে মিছিল করেন ‘কামারহাটি পৌর কর্মচারি ইউনিয়ন’-এর প্রায় ৬০ জন সদস্য। প্রায় প্রত্যেকের হাতেই ছিল বিভিন্ন দাবিদাওয়া লেখা প্ল্যাকার্ড। সঙ্গে অবিলম্বে দাবিদাওয়া পূরণের স্লোগানও দিচ্ছিলেন কর্মচারীরা। যদিও এ দিনের পর থেকে আর কোনও ভাবেই পুরসভার ভিতরে ঘুরে কোনও মিছিল করা যাবে না বলে নির্দেশিকা জারি করেছেন কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা।
পশ্চিমবঙ্গ পৌর কর্মচারী ফেডারেশনের একটি ইউনিট ‘কামারহাটি পৌর কর্মচারী ইউনিয়ন’। তার সাধারণ সম্পাদক সুধীন মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁরা পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া জানিয়েছেন, কিন্তু কেউ কোনও ব্যবস্থাই নেননি। তাঁর দাবি, পুরসভায় প্রায় ৬০০ জন অস্থায়ী কর্মী প্রতিদিন ১৫৫ টাকা মজুরি পান। তা বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করতে হবে। আবার কামারহাটি পুরসভায় ৩০০ শূন্যপদ থাকলেও দীর্ঘ দিন কোনও নিয়োগই হয়নি। ফলে কাজ করতে হিমসিম খেতে হয় কর্মীদের। স্যানিটারি ইনস্পেক্টর, পাইপ লাইন ইনস্পেক্টর ও অফিস সুপারভাইজার পদে অবিলম্বে নিয়োগ করতে হবে বলেও এ দিন দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। সুধীনবাবু বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু চেয়ারম্যান কিছুই করছেন না।’’ এ দিন কি দাবিদাওয়া জানিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হল? ‘‘মিটিং-মিছিলের সময়ে উনি অফিসে থাকেন না’’, দাবি সুধীনবাবুর।
কিন্তু এই আন্দোলন করে কি নিজেদের দলের বিরুদ্ধেই আঙুল তোলা হচ্ছে না?
সুধীনবাবুর কথায়, ‘‘অন্যায়টা তো অন্যায়ই। তাই প্রতিবাদ তো করতেই হবে। আগামী দিনে আমরা গেট মিটিং করে বিষয়টি জানাব।’’
‘কামারহাটি পৌর কর্মচারী ইউনিয়ন’-এর সভাপতি তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূলের কর্মীদেরও দাবিদাওয়া থাকতে পারে। তাঁরা তো বাইরে জানাতে যাবেন না, পুরসভার চেয়ারম্যানকেই জানাবেন। তবে এই মিছিল বা ডেপুটেশনের জন্য যদি কোনও বিশৃঙ্খলা হয়ে থাকে তাহলে সেটা চেয়ারম্যান লিখিত ভাবে জানালে ব্যবস্থা নেব।’’
নির্মলবাবুর দাবি, ‘‘পুরসভার কর্মী নিয়োগ কিংবা বেতন বৃদ্ধির জন্য তো চেয়ারম্যানকেই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখতে হবে। কর্মীরা তো সেটা করতে পারেন না।’’
এ দিনের ঘটনার পরে কামারহাটির চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘সদিচ্ছা নেই, এই অভিযোগ ঠিক নয়। তবে কারও ইচ্ছা হল আর বেতন বাড়িয়ে দেওয়া হল, কর্মী নিয়োগ হয়ে গেল— এ বোধ হয় নিয়ম নয়। সব কিছুরই তো নির্দিষ্ট আইন, নিয়ম রয়েছে। আর তা মেনে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’
পাশাপাশি, তাঁর দাবি, ‘‘পুরসভার তরফে শূন্যপদ পূরণ কিংবা অন্য বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা কেউ দেখছেন না। আসলে একটা সময়ে তো বাবা-মামা ধরে চাকরি জুটে গিয়েছিল, এখন আর সেটা হচ্ছে না বলেই এত সমস্যা, এত আন্দোলন।’’