Bhangar

ভাঙড়ে ‘ভীত এবং সন্ত্রস্ত’ আরাবুল-শওকত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন, একই প্রশ্ন নওশাদেরও

উত্তপ্ত ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির পরেও মঙ্গলবার রাতে গুলি করা হয় এক তৃণমূল নেতাকে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা ‘ভীত এবং সন্ত্রস্ত’ বলে জানালেন আরাবুল ইসলাম এবং শওকত মোল্লা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

ভাঙড়  শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ১৩:০৭
Share:

(বাঁ দিক থেকে) আরাবুল ইসলাম এবং শওকত মোল্লা। —ফাইল চিত্র।

ভাঙড়ে কোনও মানুষই নিরাপদ নন। যে কোনও দিন হামলার মুখে পড়তে হতে পারে ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলাম এবং তাঁর পুত্র হাকিমুল হোসেনকে। এমনই অভিযোগ করে ভাঙড়ে শান্তি ফেরাতে পুলিশকে আবেদন করলেন তৃণমূলের দুই ‘প্রভাবশালী নেতা’ আরাবুল ইসলাম এবং শওকত মোল্লা। শুধু তা-ই নয়, এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির গ্রেফতারের দাবি করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও আইএসএফআই আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তৃণমূল নেতাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। এর প্রেক্ষিতে নওশাদ পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে না।

Advertisement

বুধবার ভাঙড়ের ঘটকপুকুরে দাঁড়িয়ে এলাকায় শান্তি ফেরাতে এবং সমাজবিরোধীদের উৎখাতে অভিযান এবং তল্লাশি চালানোর দাবি করেন তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা। একই সুর আবাবুলের গলাতেও। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ভাঙড় জুড়ে মাওবাদী সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে।’’ পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই রাজনৈতিক আকচাআকচিতে উত্তপ্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই এলাকা। প্রায় প্রতি দিন এলাকায় বোমাবাজির ঘটনা ঘটছে। আক্রান্ত হচ্ছেন দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। ভোটের ফলের দিন, গত মঙ্গলবার তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে দু’জন আইএসএফ কর্মী ছিলেন। এবং এক জন ছিলেন সাধারণ গ্রামবাসী। নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস ঠেকাতে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে পুলিশ প্রশাসন। বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তার পরেও এলাকায় সন্ত্রাস থেমে নেই। এতে তাঁরা ভীত বলে দাবি করেছেন শওকত এবং আরাবুল। তাঁদের অভিযোগ, ভাঙড়ের অনেক বাসিন্দা প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে অন্যত্র বসবাস শুরু করেছেন। ভয়ে বাড়ি থেকে বাইরে বার হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের রুজি-রোজগারেও টান পড়ছে। এই অবস্থায় সব রাজনৈতিক দলকেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করতে আবেদন করেছেন তাঁরা।

আরাবুলের কথায়, ‘‘ভাঙড়ে যে অবস্থা চলছে, সবাই দেখছেন। পুলিশ বলছে, অভিযান চলছে। অন্য দিকে, এলাকায় মুড়িমুড়কির মতো বোমা পড়ছে। তৃণমূল কর্মীরা রাতের অন্ধকারে গুলিবিদ্ধ হচ্ছেন। পুলিশি অভিযানের পরেও কী ভাবে এরা সংগঠিত হয়ে মানুষের উপর গুলি চালাচ্ছে! আমি মর্মাহত। এই রকমের সন্ত্রাস জঙ্গলমহলে দেখেছি। ভাঙড়ে সকালে এক রকম রূপ, বিকেলে এক রকম এবং রাত্রে অন্য আর এক রকম রূপ। ভাঙড়ের মানুষের মুখে হাসি নেই। প্রশাসনকে বলব, এ বার তারা ব্যবস্থা নিক। ভাঙড়কে শান্ত করতে হবে।’’

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে আক্রান্ত হয়েছেন পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের পরাজিত প্রার্থী হাতেম মোল্লা। চালতাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই প্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি চলে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুধবার সকালে তাঁর স্ত্রী জোৎস্না মোল্লা বলেন, ‘‘সারা রাত আতঙ্কের কারণে বাড়ির মধ্যে বন্দি ছিলাম। বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় বোমাবাজি করা হয়েছে।’’ সকালে হাতেমকে দেখতে যান শওকত, আরাবুলরা। এলাকায় ১৪৪ ধারা থাকা সত্ত্বেও কেন এমন ঘটনা বার বার ঘটছে, তা প্রশাসনকে তদন্ত করে দেখার জন্য আবেদন করেন তাঁরা। শওকত আবার অশান্তির মূলে দায়ী করেছেন নওশাদকে। তাঁর কথায়, ‘‘নওশাদ ধূর্ত এবং নাটকবাজ। মুখ এবং মুখোশ আলাদা তাঁর। ভাঙড়ের যুব সমাজকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দিচ্ছেন উনি।’’ ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা ভাঙড়ে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শওকত আরও বলেন, ‘‘আইএসএফ আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালাচ্ছে এলাকায়। ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ভাঙড়ে বোমা-গুলি চলছে! যে কোনও মুহূর্তে আরাবুল ইসলাম এবং হাকিমুল ইসলামের উপর আক্রমণ হতে পারে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। এই অবস্থায় পুলিশকে বলব, আরও সক্রিয় হোন।”

অন্য দিকে নওশাদ বলছেন, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদের কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। ভাঙড়ে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে আমি সাধ্য মতো কাজ করছি।’’ অন্য দিকে, সবাই শান্তি ফেরানোর কথা বললেও ভাঙড়ে সত্যি সত্যি শান্তি কবে ফিরবে, তা নিয়ে চিন্তায় এলাকার সাধারণ মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন