সালিশির টাকা আদায়ের আব্দার, ধৃত তৃণমূল নেতা

যুবককে খুনের ঘটনায় তাঁর দুই ‘প্রেমিকাকে’ গ্রেফতার করে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। এরই মধ্যে উল্টো বিপত্তি। শুক্রবার রাতে লোকজন নিয়ে থানায় হাজির হয়ে স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা দাবি তোলেন, অভিযুক্তদের ১০ লক্ষ টাকা ‘ক্ষতিপূরণ’ দিতে হবে নিহতের পরিবারকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৭ ০২:১৬
Share:

যুবককে খুনের ঘটনায় তাঁর দুই ‘প্রেমিকাকে’ গ্রেফতার করে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।

Advertisement

এরই মধ্যে উল্টো বিপত্তি।

শুক্রবার রাতে লোকজন নিয়ে থানায় হাজির হয়ে স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা দাবি তোলেন, অভিযুক্তদের ১০ লক্ষ টাকা ‘ক্ষতিপূরণ’ দিতে হবে নিহতের পরিবারকে। পুলিশকে এ ব্যাপারে মধ্যস্থতা করতে হবে বলেও আব্দার জোড়ে তারা।

Advertisement

পাথরপ্রতিমা থানার পুলিশ এ হেন দাবি শুনে হকচকিয়ে যায়। নিহত প্রসেনজিৎ মাইতির পরিবারও এমন আজগুবি দাবি সমর্থন করেনি। শেষমেশ দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার কাকদ্বীপ আদালতে তাঁদের জামিন মঞ্জুর হয়েছে।

সোমবার দেহ উদ্ধার হয়েছিল প্রসেনজিতের। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দুই বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ওই যুবকের। দুই মহিলাই চক্রান্ত করে খুন করেছে প্রসেনজিৎকে, এমনটাই দাবি করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। গ্রেফতার হয় রেবতী মণ্ডল ও প্রতিমা মণ্ডল নামে দুই মহিলা।

রাতের দিকে শুরু হয় গোলমাল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাথরপ্রতিমা থানার দক্ষিণ শিবগঞ্জের বাসিন্দা তথা স্থানীয় একটি ক্লাবের কর্মকর্তা সুদীপ্ত গুছাইত এবং দীপক মাইতি পাথরপ্রতিমা থানায় গিয়ে ঝামেলা শুরু করেন।

তাঁদের দাবি, খুনের মামলা যেমন চ‌লছে চলুক, তার বাইরে সালিশি সভা করে অভিযুক্তদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে তাদের হাতে দিক পুলিশ। সেই টাকা তাঁরা নিহতের পরিবারকেই দেবেন।

পুলিশ পড়ে বিড়ম্বনায়। পুলিশ কর্তারা বোঝানোর চেষ্টা করেন, এ ভাবে সালিশি করে অভিযুক্তদের থেকে টাকা আদায় করা বেআইনি। পুলিশ তা করতে পারে না। কিন্তু কোনও কথাই কানে তোলননি ওই তৃণমূল নেতারা। তাঁদের সঙ্গে ক্লাবের বেশ কিছু সদস্য জুটে গিয়ে হুজ্জুত শুরু করে।

পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা ঘটনার কথা জানতে পেরে হস্তক্ষেপ করেন। মহকুমা সদর থেকে পাথরপ্রতিমা থানায় বাড়তি ফোর্স আনা হয়।

সমীরবাবু বলেন, ‘‘দলের তরফে এ রকম কাজ আমরা সমর্থন করি না। মৃতের পরিবার গরিব বলে হয় তো ভাবাবেগে এরকম করে ফেলেছেন দলের ওই দুই কর্মী। তবে আমি তাঁদের বলেছি, এ সব দল বরদাস্ত করবে না।’’

সমীরবাবুর হস্তক্ষেপেও অবশ্য ঝামেলা মেটেনি। রাতে পুলিশ বিক্ষোভকারী দুই নেতাকে গ্রেফতার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে ঝামেলা পাকানোর অভিযোগ আনা হয়।

শনিবার আদালত তাঁদের জামিন দিয়েছে। এ দিন রেবতী ও প্রতিমাকেও কাকদ্বীপ আদালতে তোলা হয়েছিল। বিচারক তাঁদের সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

প্রসেনজিতের মামা পবিত্র মাইতি বলেন, ‘‘আমরা এ রকম দাবি কেন করব? এ রকম ক্ষেত্রে পুলিশ কোনও দিনও ক্ষতিপূরণ দেয়? আমরা শুধু দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই।’’

সুন্দরবন পুলিশ জেলার এক অফিসার বলেন, ‘‘নেহাতই উটকো ঝামেলা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন