বসন্তকুমার রায়। নিজস্ব চিত্র
ইঙ্গিত আগে থেকে ছিলই। তাতে ঘি ঢেলেছে বুধবারের ঘটনা।
দুর্ব্যবহার ও গাফিলতির অভিযোগ ওঠার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বদলি করা হল কাকদ্বীপ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বসন্তকুমার রায়কে। বুধবার হরিপুরের বাসিন্দা প্রসূতি মৌমিতা হালদারের গর্ভেই মারা যায় শিশু। তার পরেই ওই চিকিৎসকের বদলির দাবিতে বেশ কয়েক ঘণ্টা ওই চিকিৎসক এবং হাসপাতাল সুপারকে ঘেরা করেন রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরা। পরে সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগও করেন তাঁরা।
ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় ঝামেলার পরে বুধবারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার যখন পরিকাঠামো বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন দুর্ব্যবহার ও গাফিলতির ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এমন যাতে না হয় তা আমরা দেখছি।’’ হাসপাতাল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সিনিয়র ডাক্তারদের একটি অংশ দীর্ঘ দিন থেকে বদলি না হওয়ায় অনেক সময়েই প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে নিজেদের মতো করে চলতে শুরু করেন। সেখান থেকেই অনিয়ম ও গাফিলতি শুরু হয়।
বুধবার বসন্তবাবুকে বদলির সুপারিশ স্বাস্থ্যভবনে পৌঁছয়। সন্ধ্যার পরে সেই মতো চিকিৎসককে বদলির নির্দেশ আসে স্বাস্থ্য জেলার কর্তাদের কাছে। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে আসেননি বসন্তবাবু। তিনি নিজে অবশ্য দুর্ব্যবহার বা গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, রোগীর রক্তচাপ কমানোর ওষুধ চলছিল। তা না কমলে প্রসব করানো মুশকিল ছিল।
কাকদ্বীপে দীর্ঘ দিন ধরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেছিলেন বসন্তবাবু। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। তাঁকে মারধর করেছিলেন রোগীর পরিবার। সেই ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে বদলির নির্দেশ হয়ে থাকলেও তা কার্যকর করা হচ্ছিল না স্বাস্থ্যভবন থেকেই। সেটাই এ বার সম্ভব হল।
বসন্তবাবুর কথায়, ‘‘ভাল পরিষেবাই দিচ্ছিলাম। তা কাকদ্বীপের মানুষের পছন্দ হচ্ছে না। তাই আমি নিজেও চলে যেতে চাইছিলাম। বদলি নিয়ে যা হয়েছে ভালই হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, বাইরে প্র্যাকটিসের সময়ে ওই রোগীকে তিনিই চেকআপ করেছেন। তিনিই ওই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। রোগীপক্ষের ধারণা ছিল, তিনিই হাসপাতালে রোগীর যাবতীয় দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন। তা হয়নি বলেই রোগীর পরিবারের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে। প্রসূতি বিভাগে নতুন কোনও ডাক্তার এখনও আসেননি। ফলে চাপ আরও বাড়ল দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের উপরে।
এ দিকে, রোগীর অভিযোগ খতিয়ে না দেখেই একজন ডাক্তারকে বদলি করে দেওয়ার বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের কাকদ্বীপ শাখার নেতা বিশ্বনাথ জানা বলেন, ‘‘পরিস্থিতির শিকার হতে হল এক চিকিৎসককে। রোগীপক্ষের অভিযোগ থাকতেই পারে। তার তদন্ত হবে। বসন্তবাবু সিনিয়র ছিলেন। হাসপাতালে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতেন। কাজ করলে ভুলত্রুটি হয়।’’
বদলি নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি হাসপাতালের সুপার রাজর্ষি দাস।