দেড়শো বছর আগে চালু রেলপথই ভরসা

যাত্রীর তুলনায় ট্রেন কম। যাতায়াতের অসুবিধা নিয়ে প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখা। আর প্রায় দেড়শো বছর আগে এই সমস্যার কথা ভেবে বনগাঁ-শিয়ালদহ ট্রেনলাইন তৈরির এ ব্যাপারে যাঁরা উদ্যোগী হয়েছিলেন, তাঁদের এক জন গোবরডাঙারই বাসিন্দা শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৫
Share:

এখান থেকেই ছাড়তে পারত কলকাতার বাস। কিন্তু সেই ব্যবস্থা হয়নি এখনও। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

যাত্রীর তুলনায় ট্রেন কম। যাতায়াতের অসুবিধা নিয়ে প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখা। আর প্রায় দেড়শো বছর আগে এই সমস্যার কথা ভেবে বনগাঁ-শিয়ালদহ ট্রেনলাইন তৈরির এ ব্যাপারে যাঁরা উদ্যোগী হয়েছিলেন, তাঁদের এক জন গোবরডাঙারই বাসিন্দা শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন।

Advertisement

শুধু তাই নয়, যশোর রোড তৈরি থেকে শুরু করে গোবরডাঙা-ইছাপুরের মধ্যে রাস্তাও তৈরি হয়েছিল সেই কালে। এখন লোকসংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু রেল বা সড়ক পথে পরিবহণের উন্নতি তো দূরের কথা, উল্টে বাস টার্মিনাস তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। কিন্তু স্থানীয় রুটে বাস চললেও শহর কলকাতায় যাতায়াতের জন্য গোবরডাঙাবাসীর ভরসা এখনও শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের আমলের রেলপথই।

১৮৮৩ সালে দমদম থেকে দত্তপুকুর রেলপথ তৈরির সময়ে বনগাঁর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে রেলপথকে গোবরডাঙা পর্যন্ত টেনে আনার পিছনে শ্রীশচন্দ্রের ভূমিকা অন্যতম। বারাসত মহকুমা তৈরি করে যোগাযোগের সুবিধার জন্য গোবরডাঙাকে বসিরহাট মহকুমা থেকে বিছিন্ন করে বারাসতে যুক্ত করেন শ্রীশচন্দ্রই। সড়ক পথে যাতায়াতের সুবিধার জন্য গোবরডাঙা-ইছাপুরের মধ্যে রাস্তাটি নির্মাণেও ভূমিকা ছিল তাঁর। ১৮৭০ সালে গোবরডাঙা পুরসভার তৈরির পরে প্রথম চেয়ারম্যান হন শ্রীশচন্দ্রই। গোবরডাঙার উন্নয়নে জমিদার বাড়ির সারদাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের মতোই বড়বাড়ির শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সব থেকে বেশি অবদান রয়েছে। বিধবা বিবাহ বিল পাস হওয়ার পরে ১৮৫৬ সালের ৭ ডিসেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনুরোধে প্রথম বিধবা বিবাহ করেন শ্রীশচন্দ্রই। ঋণগ্রস্ত মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বিদ্যাসাগর যে টাকা পাঠিয়েছিলেন, সেখানেও সাহায্য করেছিলেন শ্রীশচন্দ্র।

Advertisement

গোবরডাঙার শিক্ষাবিদ পবিত্র মুখোপাধ্যায় জানালেন, যোগাযোগের প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শহর কলকাতার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকেনি গোবরডাঙা। বরং দেশ-বিদেশেও কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন এখানকার বহু সন্তান। জামসেদপুরে টাটা নগরী তৈরির রূপকার গোবরডাঙার কৃতী সন্তান প্রমথনাথ বসুর মতো অনেকেই নিজের এলাকাতেও বিজ্ঞান গবেষণা ও জনমানসে তার ব্যবহারিক দিক তুলে ধরেছিলেন।’’ গোবরডাঙার উন্নয়নে প্রসন্ন জমিদার বাড়ির (মুখোপাধ্যায়) ভূমিকা যেমন, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ খাঁটুরার বন্দ্যোপাধ্যায়ের (বড় বাড়ি) ভূমিকা। পণ্ডিত রামধন তর্কবাগীশ, ভগবান বিদ্যালঙ্কার, কত্থক শিল্পী ধরণীধর বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যাপক মুরলীধর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এই পরিবারের সন্তানেরা গোবরডাঙার, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধূলা এবং বিজ্ঞানচর্চায় এক দিগন্ত খুলে দিয়েছিলেন।

দেড়শো বছর আগের সেই সব ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে এসে গোবরডাঙার উন্নয়ন শুরু হলেও ট্রেন, সড়ক যোগাযোগ আগের মতোই পড়ে রয়েছে। বরং রাস্তা খারাপ হয়েছে আরও। গোবরডাঙা থেকে কলকাতা পর্যন্ত যে বাস চালু হয়েছিল, সেগুলিও বন্ধ। বিশাল একটি বাস টার্মিনাস তৈরি হলেও সেখান থেকে একটিও বাস চলাচল করে না। স্থানীয় যুবক বিভাস দেবের কথায়, ‘‘কলকাতা যেতে গেলে আমাদের সেই ট্রেন ছাড়া গতি নেই। সব থেকে সমস্যা হয় অসুস্থ কাউকে কলকাতা নিয়ে যেতে।’’ আর এক যুবক রাজু বণিকের কথায়, ‘‘বহু বছর ধরে টার্মিনাস তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে, অথচ যানবাহন নেই। সকলের পক্ষে তো প্রচুর টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে সড়ক পথে যাতায়াত সম্ভব নয়।’’

কেন এই অবস্থা? গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল কাউন্সিলর শঙ্কর দত্তও স্বীকার করে বলেন, ‘‘আমাদের কলকাতা যাতায়াতের গোটাটাই ট্রেন নির্ভর। ইতিমধ্যেই আমরা পরিবহণ দফতরের কাছে আর্জি জানিয়েছি রুট পারমিট দেওয়ার জন্য। কলকাতা পর্যন্ত কিছু বাস যাতে সরাসরি চলতে পারে সে চেষ্টাই চলছে।’’ আপাতত এই প্রতিশ্রুতিটুকুই ভরসা গোবরডাঙাবাসীর। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন