এ বার শুরু গাড়ি চলাচলও

সেতুর সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ করে সোমবার দুপুর থেকে গাড়ি চলাচল শুরু হল সেতুতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নামখানা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০৫:৫৩
Share:

খুলে গেল হাতানিয়া-দোহানিয়া সেতু। ছবি: দিলীপ নস্কর।

সেতুর কাজ সামান্য বাকি থাকতেই নির্বাচনী বিধি আরোপ হওয়ার আশঙ্কায় তড়িঘড়ি উদ্বোধন করা হয়েছিল। ৭ মার্চ পূর্ত ও সড়ক দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস নামখানায় হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর উপরে সেতুর উদ্বোধনের পরে গাড়ি চলাচল যে কারণে সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। পরে সেতুর সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ করে সোমবার দুপুর থেকে গাড়ি চলাচল শুরু হল সেতুতে।

Advertisement

এ বার সড়ক পথে গাড়িতে করে নামখানার বাসিন্দারা সরাসরি কাকদ্বীপ, কলকাতায় যেতে পারবেন। বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ বা হেনরি আইল্যান্ডে যাওয়াও পর্যটকদের পক্ষে সুবিধাজনক হবে। ৩ কিলোমিটারের বেশি লম্বা সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা। ২০১৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া সেতুর নির্মাণ কাজ চার বছরের মধ্যে শেষ হয়েছে।

কাকদ্বীপ মহকুমায় নামখানা ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের বসবাস। নানা প্রয়োজনে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার বা কলকাতায় শহরে যেতে হলে হাতানিয়া-দোহানিয়া নদী নৌকোয় পেরোতে হত এত দিন। রাত বাড়লে বা ভাটার সময়ে নৌকো চলাচল বন্ধ হলে দুর্ভোগে পড়তে হত। রাতবিরেতে রোগীকে নিয়ে কাকদ্বীপ বা ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে যাওয়া ছিল বেশ অসুবিধাজনক। কৃষিজীবীরা আনাজপত্র নিয়ে যাতায়াত করতে সমস্যায় পড়তেন। মাছের বন্দর হয়েছে বকখালিতে। সমস্যায় পড়তে হত সেখানকার ব্যবসায়ী, মৎস্যজীবীদেরও। এখন ইলিশ-বোঝাই গাড়ি সরাসরি সেতু পেরিয়ে চলে আসতে পারবে ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্রে বাজারে।

Advertisement

নামখানায় ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টালে বকখালির সমুদ্রে সৈকত-লাগোয়া পর্যটন কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৭০টি হোটেল-লজ আছে। সেতুর উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিলেন হোটেল মালিকেরাও। হোটেল মালিকদের সংগঠনের এক সদস্য বলেন, ‘‘এত দিন পর্যটকেরা গাড়িতে করে এসে ভেসেলে নদী পারাপার করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তেন। সে সমস্যা আর থাকল না। এ বার সরাসরি গাড়িতে করে চলে আসতে পারবেন তাঁরা। এতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে বলে আমাদের আশা।’’

নারায়ণপুরের বাসিন্দা আনাজ বিক্রেতা সরিফা বিবি আনাজের বস্তা মাথায় নিয়ে সেতু পার করছিলেন। জানালেন, আগে নৌকোয় ন‌দী পার হয়ে নামখানা পাইকারি বাজারে যেতে হত। তাতে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা সময় বেশি লাগত। এখন আর সেই সমস্যা থাকল না। সরাসরি মিনিট পনেরো হেঁটে বাজারে পৌঁছনো যাচ্ছে। গাড়ি পারাপার শুরু হওয়ায় খুশি নামখানা ব্লকের দক্ষিণ চন্দনপিঁড়ি গ্রামের আনাজ চাষি গৌরহরি দাস, দীনেশ মণ্ডলরা। নৌকোর বদলে ছোট গাড়িতে বাজারে যেতে খরচ কম হবে বলে জানালেন তাঁরা। কলকাতা থেকে বকখালি আসা এক পর্যটকের দল সেতুর উপরে গাড়ি থেকে নেমে নদী দেখছিলেন, মোবাইলে ছবি তুলছিলেন। তাঁদের মধ্যে সোমনাথ পাঠক, তিথি শিকদাররা জানালেন, এর আগেও গাড়ি নিয়ে বকখালি এসেছেন। কিন্তু ভেসেলে গাড়ি পারাপার করতে অনেক সময় যেত। এ বার আর সেটা হবে না।

তবে সেতুতে গাড়ি পারাপার চালু হলেও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। সেতুর দু’মুখে কোনও পুলিশের দেখা মিলল না। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি পারাপার হতে দেখা গেল। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্পনা মালি (মণ্ডল)। নামখানার বিডিও রাজীব আহমেদ বলেন, ‘‘এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন