বিক্ষোভ: সামিল গ্রাহকেরা। নিজস্ব চিত্র
কারও সামনে মেয়ের বিয়ে। কারও প্রসবের সময় এসে গিয়েছে বলে টাকার দরকার। বাবা অসুস্থ বলে টাকা তুলতে এসেও খালি হাতে ফিরলেন এক যুবক।
সকলেই গোপালনগরের সাতবেড়িয়া উপ ডাকঘরের গ্রাহক। আর সেখানকার পোস্টমাস্টার অনিমেষ মণ্ডল বেপাত্তা। অভিযোগ, গ্রাহকদের পাসবই নিয়ে চম্পট দিয়েছে অনিমেষ। ৯ ডিসেম্বর থেকে তিনি অফিসে আসছেন না বলে জানালেন গ্রাহকেরা।
পাসবই ফেরত পেতে ও জমানো টাকা তুলতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন গ্রাহক ও এলাকার মানুষজন। এর আগে পুলিশ, ডাক বিভাগের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। পোস্ট অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ চলেছে। এর আগে পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ হয়েছে। সোমবারও গ্রাহকেরা গোপালনগর থানায় ফের অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু এখনও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
পোস্ট অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু গ্রাহকেরা নয়, অনিমেষের বিরুদ্ধে ডাকঘর থেকেও থানায় অনিমেষের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সারা ভারত গ্রামীণ ডাক সেবক ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের কাছে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি করেছি।’’
জামেনা বিবি, বিশাখা বিশ্বাস, ফতেমা বিবি, রশিদা খাতুন বিশ্বাসরা বলেন, ‘‘৮ ডিসেম্বর পোস্ট মাস্টার পিওনকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাড়ি গিয়ে বলেন, বছর শেষ হতে চলেছে। পাসবই আপ-টু-ডেট করতে হবে। আমরা যেন তাঁর কাছে পাসবইগুলি দিয়ে দিই। সে দিনই পাসবই তাঁকে দিয়ে দেওয়া হয়। পর দিন থেকে তিনি বেপাত্তা।’’ অনিমেষের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি নাকি গ্রাহকদের টাকা পাসবইতে জমাই করতেন না। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত পোস্ট মাস্টারের খোঁজে তল্লাশি চলছে। অনিমেষের বাড়ি বাগদায়। তাঁর পরিবার আবার নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন ক’দিন আগে।
এ দিকে গ্রাহকেরা রোজ ডাকঘরে এসে হতাশ হচ্ছেন। বিশাখা বিশ্বাস নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘‘সামনেই আমার মেয়ের বিয়ে। ডাকঘর থেকে টাকা তুলতে না পেরে সমস্যায় পড়েছি। জানি না, কী ভাবে মেয়ের বিয়ে দেব। ওই টাকাটুকুই আমার সম্বল ছিল।’’ সামেনা খাতুন বলেন, ‘‘সামনে আমার মেয়ের প্রসব। টাকার দরকার। কিন্তু পাসবই নেই। টাকাও তুলতে পারছি না।’’ আয়েশা বিবি বলেন, ‘‘আমার পাসবই রয়েছে। কিন্তু আশি হাজার টাকা থাকার কথা। রয়েছে মাত্র ১২০০ টাকা।’’
বনগাঁ মহকুমা ডাক অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাহকেরা যাতে দ্রুত টাকা তুলতে পারেন, সে বিষয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। গোপালনগর ২ পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল সভাপতি নীলরতন শীল বলেন, ‘‘পোস্ট মাস্টারের পাশাপাশি, পিওনও চক্রান্তে জড়িত। আমরা ডাক বিভাগের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।’’