খাবারও মুখে তুলতে পারছে না জখম ষাঁড়টি।—ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
গোয়ালে ঢোকার ‘অপরাধে’ এক ষাঁড়ের মুখ কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক জনের বিরুদ্ধে। তাকে সাহায্য করার ঘটনায় অভিযুক্ত আরও এক জন। রবিবার সন্ধে ৭টা নাগাদ ঘটনাটি চোখে পড়ে গাইঘাটা থানার দিঘা গ্রামের মানুষের। বিডিও জানতে পেরে অভিযোগ দায়ের করেছেন থানায়। দু’জনকে খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালো রঙের ষাঁড়টি মুখ-চোখ পুড়ে গিয়েছে। ব্লক প্রাণিসম্পদ দফতরের আধিকারিক তপনকুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল ওষুধপত্র দিয়েছেন ষাঁড়টিকে। দু’দিন না পেরোলে তার শরীরের অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা মুশকিল বলে জানান তপন। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক ষাঁড়টি এলাকার নয়। রবিবার সকালে তাকে দিঘা গ্রামের একটি ধানখেতে দেখা গিয়েছিল। দিনভর সেখানেই ছিল। শিমুলপুর এলাকাতেও ঘোরাঘুরি করতে দেখা যেত। রবিবার সন্ধের দিকে জয়দেব দাসের বাড়ির গোয়াল থেকে গরু ডাকাডাকি করছিল। ষাঁড়টি সেখানে যায়। পথে বন্নে ঘোষ নামে এক যুবককে গুঁতো দিতে গিয়েছিল বলেও জানাচ্ছেন কেউ কেউ। গোয়ালে গরুটিকে গুঁতোতে গিয়েছিল। অভিযোগ, সেই রাগে জয়দেব ষাঁড়ের মুখে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। অভিযোগ, তাকে ওই কাজে সাহায্য করে বন্নে।
এক মহিলা জানান, রাতের দিকে মাঠে আগুন জ্বলতে দেখেন তাঁরা। ভেবেছিলেন, কেউ শীতে আগুন ধরিয়ে পোহাচ্ছে। সোমবার সকালে দেখা যায়, পোড়়া ক্ষত নিয়ে ষাঁড়টি মাঠে পড়ে রয়েছে। লোকজন জয়দেব ও বন্নেকে জেরা করে ঘটনার কথা জানতে পারেন। পঞ্চায়েতের প্রাণিবন্ধু হীরক বসু দফতরের ব্লক অফিসে খবর দেন। প্রশাসনের তরফে খেতের একপাশে ত্রিপল টাঙিয়ে ষাঁড়টির শুশ্রূষা চলছে। গ্রামের মহিলা-পুরুষ ভিড় করছেন। সকলেই এমন অমানবিক ঘটনায় ক্ষুব্ধ। গ্রামের লোকজন ঝিম ধরে পড়ে থাকা ষাঁড়ের মুখের সামনে লতাপাতা, খড়, জল দিচ্ছেন। কিন্তু কিছুই সে মুখে তুলছে না। গাইঘাটার বিডিও বিব্রত বিশ্বাস পুলিশের কাছে জয়দেব ও বন্নের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এক মহিলার কথায়, ‘‘ষাঁড়টিকে মেরে তাড়িয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু অবলা প্রাণীর উপরে এমন অত্যাচার কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ তাঁরা দোষীদের শাস্তি দাবি করছেন। প্রয়োজনে তাঁরা চাঁদা তুলে ষাঁড়ের চিকিৎসা করাবেন বলে জানিয়েছেন। জয়দেব বাড়িতে নেই। তার ছেলে মিঠুন বলেন, ‘‘রবিবার রাতের ঘটনা আমি কিছু জানি না। তবে বাবা কোমরে ও মা হাতে চোট পেয়েছেন। ওঁরা ডাক্তার দেখাতে গিয়েছেন।’’