প্রেমিকাকে সিঁদুর দিতে গিয়ে ধমক পুলিশ কাকুর

খবর যায় হাবরা থানায়। পুলিশ আসে। ছেলেমেয়েদের আনা হয় থানায়।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবরা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

সরস্বতী পুজোর দিনটা সকাল থেকে এক সঙ্গে কাটিয়ে দু’জনে ঠিক করে ফেলে, দিনের দিনই বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে।

Advertisement

বিকেলের আলো তখন নিভু নিভু। স্থানীয় কয়েক জন দেখেন, সাইকেল থেকে নামল দু’জন। মেয়ে নির্ঘাত স্কুলে পড়ে। আর ছেলের তো গোঁফের রেখাই ওঠেনি।

লোকজনের সন্দেহ দানা বাঁধে। তাঁরা দেখেন, মন্দিরের ঢুকে পকেট থেকে একটা ছোট্ট কৌটো বের করল ছেলেটি। নির্ঘাত সিঁদুর। ঠিক তাই। মাথা নিচু করে দাঁড়ানো মেয়েটির সিঁথিতে সিঁদুর পরানোর জন্য তখন প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রেমিক। আর দেরি করেননি আশেপাশের লোকজন, যাঁরা এতক্ষণ নজর রেখেছিলেন যুগলের উপরে। তাঁরা প্রতিহত করেন।

Advertisement

খবর যায় হাবরা থানায়। পুলিশ আসে। ছেলেমেয়েদের আনা হয় থানায়।

সোমবার সন্ধ্যায় হাবরার ওই ঘটনায় পুলিশ জানতে পারে, মেয়েটির বয়স বছর ষোলো। পড়ে দশম শ্রেণিতে। আর ছোকরা প্রেমিকের বয়স মেরেকেটে সতেরো। সে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। দু’জনের সঙ্গে কথা বলেই পুলিশ ও চাইল্ড লাইন বুঝতে পারে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে বিয়ে করা তো দূরের কথা, বাড়িতে বললেও বকুনি জুটবে— এ কথা বিলক্ষণ জানে দু’জন। সে জন্যই কাউকে কিচ্ছুটি না জানিয়ে মন্দিরে দাঁড়িয়ে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে সেরে ফেলতে চেয়েছিল প্রেমিক-প্রেমিকা।

কিন্তু এদিকে একে অপরের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তারা । মেয়েটি হাবরার বাসিন্দা। দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। লেখাপড়াতে বরাবরই খুব ভালো সে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লালে কখনও সে প্রথম বা দ্বিতীয় হয়েছে। ছেলেটি অন্য একটি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তারও বাড়ি বাড়ি হাবরা এলাকায়।

স্কুলের সরস্বতী পুজো দেখতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল দু’জন। সারা দিন ঘোরাঘুরির পরে সিদ্ধান্ত নেয়, বিয়েটা এখনই সেরে ফেলা জরুরি। দু’জনকে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আজ, বুধবার বারাসতে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে হাজির করানো হবে তাদের। আপাতত তারা যে যার বাড়িতেই ফিরবে বলে জানিয়েছে চাইল্ড লাইন।

চাইল্ড লাইনের হাবরা শাখার সদস্য প্রকাশ দাস বলেন, ‘‘দু’টি পরিবারের সদস্যেরা আমাদের কথা দিয়েছেন, তাঁরা ছেলেমেয়ের উপরে নজর রাখবেন। পরিণত বয়সে দু’জনে বিয়ে করতে চাইলে তাঁদের আপত্তি নেই।’’

মেয়েটি পড়াশোনায় প্রথম সারির। তারও মাথায় চাপল বিয়ের ভূত?

হাবরার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেয়েটি জানিয়েছে, প্রেমের টানেই এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিল তারা। বাড়িতে কেউ কিছু জানে না। তবে দু’জনের বাড়িতে খবর দিতেই হয়েছে পুলিশকে। কিশোরী বলে, ‘‘সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা। এখন মন দিয়ে লেখাপড়া করে ভাল রেজাল্ট করতে চাই।’’

পুলিশ কাকুদের মার্কশিট এনে দেখিয়ে যাব, থানা ছাড়ার আগে বলে গিয়েছে মেয়েটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন