থ্যালাসেমিয়াকে হারিয়ে সফল সায়নী-উপমা

অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর একাগ্রতার কাছে ডাহা ফেল শারীরিক প্রতিকুলতা আর আর্থিক অনটন। শরীরে মারণরোগ থ্যালাসেমিয়াকে সঙ্গী করেও মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে দেগঙ্গার সায়নী মণ্ডল আর উপমা মণ্ডল এখন অন্যদের কাছে প্রেরণা। দেগঙ্গার বীণাপানি বালিকা বিদ্যালয় থেকে তারা পরীক্ষা দিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০১:১৭
Share:

উপমা মণ্ডল ও সায়নী মণ্ডল।

অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর একাগ্রতার কাছে ডাহা ফেল শারীরিক প্রতিকুলতা আর আর্থিক অনটন।

Advertisement

শরীরে মারণরোগ থ্যালাসেমিয়াকে সঙ্গী করেও মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে দেগঙ্গার সায়নী মণ্ডল আর উপমা মণ্ডল এখন অন্যদের কাছে প্রেরণা। দেগঙ্গার বীণাপানি বালিকা বিদ্যালয় থেকে তারা পরীক্ষা দিয়েছিল। দু’জনেরই বাড়ি বেড়াচাঁপার পুরনো রথতলায়। আর্থিক অভাব এবং শারীরিক অসুস্থতায় এক সময় পড়াশোনা চালানো নিয়েই বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছিল। মাসে এক দিন রক্ত নিতে হয়। অধিকাংশ দিন স্কুলে যেতে পারেনি। মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়েও দু’জনেই কাহিল ছিল। তাতেও অবশ্য দমে যায়নি ওরা।

বাংলা, জীবন বিজ্ঞান এবং ইতিহাসে লেটার-সহ ৫০৪ নম্বর পেয়েছে সায়নী। বাবা-মা থেকে আত্মীয়-পরিজন সবাই তার রেজাল্টে খুশি। গর্বিত স্কুলের শিক্ষিকারাও। সায়নী বলে, ‘‘পড়া চালিয়ে যেতে চাই। চিকিৎসক হতে চাই।’’ তার মতো ছেলেমেয়েদের সুস্থ করে তুলতেই চিকিৎসক হতে চায় সে। সায়নীর বাবা সঞ্জয়বাবু ডাক বিভাগের কর্মী। মা সোমাদেবী গৃহবধূ। অভাবের সংসার। উপমা কয়েক মাস আগে এতটাই অসুস্থ ছিল যে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে স্কুলে আসতে বারন করেছিলেন। বাড়িতে বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছিল। এ হেন অসুস্থ মেয়েটি স্রেফ মনের জোরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়া তার কাছে স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন ছুঁয়ে সে খুশি। তার কথায়, ‘‘আমাকে নিয়মিত রক্ত নিতে হয়। তাতে খুব অসুস্থ হয়ে পড়তাম। ফল আরও ভাল হত।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বাতী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওরা অন্যদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। ওরা যত দুর পড়াশোনা করতে চায়, আমরা পাশে থাকব।’’ উপমার পরিবারের আর্থিক অবস্থাও অত্যন্ত অস্বচ্ছল। বাবা উৎপল মণ্ডল বিস্কুট-লজেন্সের দোকান চালিয়ে যৎসামান্য রোজগার করেন। মা পুষ্পাদেবীর কথায়, ‘‘স্বামীর স্বল্প আয়ে সংসারই চলতে চায় না। মেয়ের পরবর্তী পড়াশোনা কী করে হবে, ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছি না।’’ উপমা অবশ্য পরবর্তী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। তাঁর কথায়, ‘‘অসুস্থতা বা অনটনের কাছে হেরে যেতে চাই না। আমি আরও পড়ব।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন