শ্যামনগরের সেই নির্মীয়মাণ হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র
যশোর রোডের ওপরে শ্যামনগর এলাকায় আট তলার অর্ধনির্মিত হাসপাতালের কাঠামো পড়ে রয়েছে বহু বছর ধরে। দক্ষিণ দমদম পুরসভা ওই হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা করেছিল তৃণমূল সেখানে ক্ষমতায় আসার পরে। কিন্তু মঙ্গলবার দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে বালকের মৃত্যুর পরে জানা গেল, প্রস্তাবিত হাসপাতালে কোনও বার্ন ইউনিটই রাখা হয়নি। অথচ পরিকল্পনা রয়েছে আধুনিক হাসপাতাল তৈরির।
মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দমদমের চেয়ারম্যান হাসপাতালের বার্ন ইউনিট না থাকার প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যত দূর জানি, অগ্নিদগ্ধ রোগীর চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। এই ঘটনার পরে আমরাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। প্রস্তাবিত হাসপাতালের নকশায় অগ্নিদগ্ধ রোগীর চিকিৎসার পরিকাঠামো যাতে থাকে, তা নিয়ে উপযুক্ত জায়গায় কথা বলব।’’
বিস্ফোরণের দিন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার রাজেশ সিংহ তখন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে। সামনে বহুতলের দোতলার জানলা থেকে প্রৌঢ়ার চিৎকার, ‘‘স্যার, বাচ্চাটার চিকিৎসা হচ্ছে না। কিছু করুন!’’
কাজিপাড়া বিস্ফোরণে আহত বালক বিভাস ঘোষকে (৮) বিস্ফোরণস্থল থেকে ভ্যানে চাপিয়ে গুরুতর জখম বিভাসকে ঘটনাস্থলের কাছে দমদমের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে বার্ন ইউনিট না থাকায় বিভাসকে পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে একই সমস্যার কারণে বিভাসকে এসএসকেএমে নিয়ে যেতে বলা হয়। সেখানে পৌঁছনোর ১৫ মিনিটের মধ্যে বিভাসের মৃত্যু হয়।
ঘটনাস্থলের কাছে আর জি কর হাসপাতালে ২০ শয্যার অগ্নিদগ্ধ রোগীর চিকিৎসার পরিকাঠামো রয়েছে। সেখানে কেন বিভাসকে পাঠানো হল না?
প্রশ্নের উত্তরে এ দিন দমদমের ওই বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার নিবেদিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করতে যদি দেরি হয়, তাই পার্ক সার্কাসের বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে বিভাসকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল।’’
কবে তৈরি হবে পুরসভার হাসপাতাল?
উত্তর এখনও স্পষ্ট নয় স্বয়ং চেয়ারম্যানের কাছেও। কারণ ভেটিং নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়ে রয়েছে। উল্লেখ্য, চেয়ারম্যান যে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সেখানেই মঙ্গলবার বিস্ফোরণ হয়েছিল।
চেয়ারম্যান জানান, স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক শেষে আধুনিক সুবিধাযুক্ত হাসপাতালের একটি নকশা মঞ্জুর হয়েছে। কিন্তু ভেটিং করতে গিয়ে অন্য জটিলতা তৈরি হয়।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এস্টিমেটের উপরে ভেটিং হয়। কিন্তু পূর্ত দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এসে দেখেন, হাসপাতাল ভবন ইতিমধ্যে তৈরি!’’
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দমদমের এক পুরকর্তা জানান, হাসপাতালের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই বেসমেন্ট-সহ আট তলা বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। সে জন্য এত দিনেও ওই হাসপাতাল তৈরি করা সম্ভব হয়নি।