হেনস্থার প্রতিবাদ করায় হামলা চড়কের মেলায়

আপত্তিকর মন্তব্য, কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে চড়কের মেলায় আসা মেয়ে-মহিলাদের উত্ত্যক্ত করছিল কিছু যুবক। এক সময়ে তারা শুরু করে হাত ধরে টানাটানিও। প্রতিবাদ করতে গেলে ছুরি, ক্ষুর, আধলা ইট নিয়ে তারা প্রতিবাদীদের উপরেই চড়াও হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাদাতা

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২২
Share:

জখম গণেশ রায়।

আপত্তিকর মন্তব্য, কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে চড়কের মেলায় আসা মেয়ে-মহিলাদের উত্ত্যক্ত করছিল কিছু যুবক। এক সময়ে তারা শুরু করে হাত ধরে টানাটানিও। প্রতিবাদ করতে গেলে ছুরি, ক্ষুর, আধলা ইট নিয়ে তারা প্রতিবাদীদের উপরেই চড়াও হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার দাসপাড়ার ওই ঘটনায় স্থানীয় পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য-সহ ছ’জন জখম হন। ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় খুনের চেষ্টা, শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। বুধবার দুপুরে চণ্ডী দাস ও গোবিন্দ দেবনাথ নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, অন্য অভিযুক্তদের দ্রুত ধরতে গাইঘাটা থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তির দিন চড়কের মেলা বসে দাসপাড়ায়। মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ ভিড়ের মধ্যে ‘আপত্তিকর আচরণ’ করতে দেখা যায় জনা বারো যুবককে। তাদের বয়স পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে। প্রায় প্রত্যেকেরই গা থেকে মদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল বলে এলাকাবাসীর দাবি। আচমকা কয়েকজন তরুণীকে দেখে ওই যুবকেরা তাঁদের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে বলে অভিযোগ। এক তরুণীর চিৎকার শুনে রুখে দাঁড়ান মেলা কমিটির সদস্য বছর ছাব্বিশের প্রসেনজিৎ পাল। চিৎকার করে হুঁশিয়ার করেন ওই যুবকদের। কিন্তু তাতে ভয় পাওয়া তো দূর্, উল্টে তেড়ে আসে ওই যুবকেরাই।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, প্রসেনজিৎবাবুকে ঘিরে বেধড়ক কিল-চড়-লাথি-ঘুষি মারতে থাকে ওই যুবকেরা। মাটিতে ফেলে আধলা ইট দিয়ে ঘা মারা হয় তাঁর মাথায়। গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে। প্রসেনজিতের চিৎকারে ছুটে যান তাঁর স্ত্রী শিউলিদেবী। অভিযোগ, যুবকেরা মারতে মারতে তাঁর শাড়ি ছিঁড়ে দেয়। প্রসেনজিৎবাবুর বৃদ্ধা মা মিনতিদেবী ছেলেকে বাঁচাতে ছুটে যান। তাঁকেও মাটিতে ফেলে দেয় হামলাকারীরা।

কাছেই ছিলেন গাইঘাটা পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য গণেশ রায়। গণেশবাবুর পেটে ছুরি চালিয়ে দেয় এক যুবক। বিশ্বজিৎ দাস নামে অন্য এক যুবকের হাতে ক্ষুর মারা হয়। ক্রমে লোকজন জড়ো হচ্ছে দেখে বোমা ফাটাতে ফাটাতে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। যাওয়ার আগে থানা-পুলিশ করা হলে প্রাণে মারার হুমকিও দেয় জনতাকে। জখমদের চাঁদপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। এ দিন অভিযোগ দায়ের হয় গাইঘাটা থানায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের দাবি, ওই যুবকেরা তোলাবাজি, ছিনতাইয়ের মতো নানা অসামাজিক কাজকর্মে জড়িত। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই এলাকায় নানা অশান্তি বাধাচ্ছে তারা। তবে এত বড় ঝামেলা আগে বাধায়নি।

পঞ্চায়েত সদস্য গণেশবাবু বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে ওই ছেলেগুলো। ওরা যে এতটা বাড়াবাড়ি করবে ভাবতে পারিনি!’’ প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘ওরা দীর্ঘক্ষণ ধরে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছিল। হাত ধরে টানাটানি শুরু করায় আর সহ্য করতে পারিনি। কিন্তু বাধা দিতেই যে রকম হিংস্র ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার উপরে, মনে হয় খুনই করে ফেলত!’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন