TMC

TMC: জনপ্রিয়তাই কি শেষে কাল হল স্বপনের, প্রশ্ন গ্রামের অনেকের

পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী হওয়ার পর থেকে জনপ্রিয়তা বেড়েছিল স্বপন মাঝির। আসন্ন ভোটেও টিকিট পাবেন বলে অনেকেরই ধারণা ছিল।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২২ ০৭:০১
Share:

অনুসন্ধান: নারায়ণতলা গ্রামের এই মাঠে পড়েছিল দু’টি দেহ। নমুনা সংগ্রহ করছেন তদন্তকারীরা। নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী হওয়ার পর থেকে জনপ্রিয়তা বেড়েছিল স্বপন মাঝির। আসন্ন ভোটেও টিকিট পাবেন বলে অনেকেরই ধারণা ছিল। তাঁর এই ‘বাড়বাড়ন্তের’ জন্যই অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিলেন বলে মনে করছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। সে কারণেই তাঁকে খুন করা হল কি না, উঠছে সে প্রশ্ন। সব দিক খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

তবে তাঁর সঙ্গী যে দু’জন এ দিন দুষ্কৃতী-হামলায় খুন হলেন, তাঁরা খানিক বেঘোরেই মারা গেলেন বলে মত অনেকের। বৃহস্পতিবার সকালে দলের মিটিংয়ে যাওয়ার সময়ে দলের কর্মী ঝন্টু ও ভূতনাথকে ডেকে নিয়েছিলেন স্বপন। এক সঙ্গে দলের বৈঠকে যাওয়া ছাড়া আর কোনও কারণ ছিল না। পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীদের মূল লক্ষ্য ছিলেন স্বপনই। বাইক চালাচ্ছিলেন তিনি। গ্রামের রাস্তায় জনা কয়েক দুষ্কৃতী পথ আটকায়। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। বাকি দু’জন পালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাক্ষী রাখতে চায়নি হামলাকারীরা। সে জন্য মাঠের মধ্যে ধরে ফেলে তাঁদেরও মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে, গলার নলি কেটে খুন করে পালায়।

ক্যানিংয়ের গোপালপুর পঞ্চায়েতের নারায়ণতলায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন স্বপন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এলাকার মানুষের বিপদে-আপদে পাওয়া যেত তাঁকে। কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য হোক বা কারও মেয়ের বিয়েতে পাশে দাঁড়ানো— সব দরকারেই থাকতেন স্বপন। তাঁকে কেন্দ্র করেই এলাকায় তৃণমূলের একটি পক্ষ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।

Advertisement

স্বপনের সর্বক্ষণের সঙ্গী বাদল নস্কর জানান, কিছুদিন ধরে প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছিলেন স্বপন। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার ও ক্যানিং থানায় অভিযোগও জানিয়েছিলেন। দু’দিন আগে স্থানীয় বিধায়ককেও বিষয়টি জানান।

বাদলের দাবি, এই ঘটনায় জড়িত কয়েকজন। তারাই কয়েক মাস আগে বাদলকে খুনের চেষ্টা করেছিল। সে সময়ে যে তিনজনের বিরুদ্ধে বাদলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছিল, তারা এলাকার এসইউসি নেতা ইয়াইয়া আখন্দের অনুগামী বলে পরিচিত। স্থানীয় সূত্রের খবর, গোপালপুর পঞ্চায়েতে এক সময়ে দাপট ছিল এসইউসির। গত পঞ্চায়েত ভোটে অবশ্য ১৮টির মধ্যে মাত্র দু’টি আসন পায় তারা। হারানো জমি উদ্ধারের জন্য তারা এই ঘটনা ঘটাতে পারে বলে দাবি এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের। আখন্দ অবশ্য বলেন, “আমি গত দু’দিন ধরে একটি মিটিংয়ে কলকাতায় আছি। এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। যাদের কথা বলা হচ্ছে, তাদের সঙ্গেও আমার কোনও যোগাযোগ নেই। সেটা প্রশাসনও জানে।”

এ দিকে, গ্রামের তিনজনের মৃত্যুতে আতঙ্কের পরিবেশ গ্রামে। শোকার্ত পরিবারগুলি। স্বপনের দিদি লক্ষ্মী সর্দার বলেন, “অনেকে ওকে হিংসা করত।” স্বপনের মেয়ে পুষ্পর কথায়, “শুনেছিলাম বাবার সঙ্গে অন্যদের গন্ডগোল আছে। খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে এ সব নিয়ে বাড়িতে ছোটোদের সামনে বাবা কোনও আলোচনা করতেন না। আমরা চাই খুনিদের শাস্তি হোক।”

ভূতনাথের বাবা বাসুদেব প্রামাণিক বলেন, “ছেলে ঘরেই ছিল। আমাকে বলল, স্বপনদার সঙ্গে মিটিংয়ে যাচ্ছি। আমি পান্তা খেয়ে যেতে বললাম। খেয়ে বেরোলো। আধ ঘণ্টার মধ্যে শুনলাম, খুন হয়ে গিয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement