গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। নিজস্ব চিত্র।
সবে ভোরের আলো ফুটেছে তখন। রাস্তা জুড়ে জুতো মসমস করে এগিয়ে আসা জংলা জলপাই পোশাকের দলটাকে দেখে সরে ডাক বন্ধ করে সরে দাঁড়াল হাঁস-মুরগিগুলো। গ্রামে ঢোকার পরেই রাস্তার পাশের বাড়িগুলির দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করলেন ভোট সামাল দিতে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। ঘুমভাঙা চোখে দরজা খুলেই বন্দুক হাতে জওয়ান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হতবাক গৃহস্থ।
স্বরূপনগরের হাকিমপুর-বিথারির সীমান্তবর্তী দহরখন্দা গ্রামের মানুষ বিএসএফ দেখে অভ্যস্ত। ভারী বুটের রুটমার্চও এই গ্রামের অজানা নয়। কিন্তু বাড়ির দরজা খুলেই বন্দুক হাতে জলপাই পোশাককে দেখতে পাওয়া এই প্রথম। তাই প্রথমে খানিক ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। ‘‘যুদ্ধটুদ্ধ লাগল নাকি?’’ এই বলে অনেকে চিৎকার-চেঁচামেচিও জুড়ে দেন। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা তাঁদের বোঝান, তাঁরা বিধানসভা নির্বাচনের পরিস্থিতি দেখভালের জন্য এসেছেন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই শুনে খানিক আশস্ত হলেও গ্রামবাসীরা একান্তে বলছেন, ‘‘কত নির্বাচন তো এলো গেল! কিন্তু সীমান্তবর্তী গ্রামে এত পুলিশ-কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আসতে আগে দেখিনি।’’
সীমান্তবর্তী দহরখন্দা গ্রামে আব্দুল করিম সর্দারের ইটের গাঁথনির উপর টিন-পলিথিনের ছাওনি দেওয়া ঘর। বাড়ির পিছন দিয়ে বয়ে গিয়েছে সোনাই নদী। ওই নদীর ওপারে বাংলাদেশের সাতক্ষিরার ভাদলি গ্রাম। দহরখন্দায় গিয়ে জেলা পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী জানায়, সীমান্তবাসীদের কাছে পরিচয়পত্র, আধার কার্ড রয়েছে কি না, সীমান্তে অবৈধ পারাপার হচ্ছে না কি না জানতেই দিন কয়েক ধরে তাঁরা গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন। নির্বাচন পর্যন্ত তাঁদের টহল চলবে। স্থানীয় বাসিন্দা খগেন মণ্ডল, বাচ্চু মিঞা, সালাউদ্দিন ঘরামি, সকিনা বিবিরা জানান, এখানকার বহু ছেলেমেয়ের বিয়ে হয়েছে নদীর ওপারের বাংলাদেশের গ্রামে। সোনাইয়ের গভীরতা কম। গরম কালে এই নদীতে জল থাকে না বললেই চলে। সেই সুবিধা নিয়েই দুই দেশের মধ্যে অবৈধ পারাপার চলে। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা সোনাই পেরিয়ে এপারে চলে আসে। নির্বাচন ‘নিয়ন্ত্রণ’ করে। কিন্তু এর আগে পুলিশ-প্রশাসন বাড়ি বাড়ি এসে ভোটারদের নিরাপত্তার খোঁজখবর নেয়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে বিএসএফ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রতি দিন সীমান্তের গ্রামগুলিতে টহল দিচ্ছেন। নিশ্চিন্তে ভোটাকেন্দ্রে যেতে বলছেন। কোনও অভিযোগ থাকলে থানায় গিয়ে জানাতেও বলা হচ্ছে। প্রশাসনের এই তৎপরতায় খুশি গ্রামবাসীরা। কিন্তু তাঁদের আশঙ্কা, নির্বাচনের পরে তো কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে যাবে। তখন তাঁদের নিরাপত্তা দেবে তো প্রশাসন? এটাই এখন ভাবাচ্ছে সোনাই নদীর পারের বাসিন্দাদের।