বিয়ের গয়না লুঠ, পাশে দাঁড়াল গোটা পাড়া

সকলের সহযোগিতায় শনিবার রাতে বিয়ে হল মানসী নামে ওই তরুণীর। নিজেরাই জোগাড়যন্ত্র করে নতুন বৌকে সাজিয়েগুজিয়ে ঘরে তুললেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮ ০০:৪৪
Share:

শুভসূচনা: মানসীকে আশীর্বাদ করছেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যেরা। শনিবার, দেগঙ্গায়। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

বিয়ের চার দিন আগের ঘটনা। অনেক কষ্টে জোগাড় করা নগদ টাকা, সোনাদানা লুঠ করে পালায় ডাকাত দল। একমাত্র মেয়ের বিয়ের আগে এমন ঘটায় চিন্তায় ঘুম ছুটে গিয়েছিল দেগঙ্গার চ্যাংদানা গ্রামের সর্দার পরিবারের। বিয়ের ক’দিন আগে এমন বিপদের মুখে পড়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন কনেও।

Advertisement

তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান হবু বর ও তাঁর পরিবার। সাহায্যের হাত বাড়ান পড়শিরাও। সকলের সহযোগিতায় শনিবার রাতে বিয়ে হল মানসী নামে ওই তরুণীর। নিজেরাই জোগাড়যন্ত্র করে নতুন বৌকে সাজিয়েগুজিয়ে ঘরে তুললেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। সব দেখে নিশ্চিন্ত মানসীর বাবা মণিমোহন সর্দারও।

শনিবার মণিমোহনবাবু বলেন, ‘‘একমাত্র মেয়েটার ভাল করে বিয়ে দেব বলে তিলে তিলে টাকা জমিয়ে সোনার গয়নাগুলি বানিয়েছিলাম। আরও অনেক শখের জিনিসও কেনা হয়েছিল। সব কিছু ডাকাতে নিয়ে গেল। আত্মীয়-পরিজনেদের নিমন্ত্রণ করা হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিল।’’ এ দিন মানসীর বিয়ের পরে বাবা জানান, বরপক্ষ এবং পড়শিদের পাশে পেয়েই এই সঙ্কটের সময়টা কেটে গেল।

Advertisement

বিয়ের আসরে এ দিন হাজির ছিলেন মানসীর পড়শিরাও। তাঁরা জানান, ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে গ্রামে পাশাপাশি থেকেছেন আর বিপদের দিনে পাশে থাকবেন না, তা কি হয়! ডাকাতির ঘটনার পর থেকে তাই টানা সর্দার পরিবারের পাশে ছিলেন প্রতিবেশী ফারুক আহমেদ। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘মণিমোহনদার মেয়ে তো আমাদেরও মেয়ে। ওঁর বিয়ের প্যান্ডেল, বাজারহাট থেকে মিষ্টি আনা— আমরাই সব দেখভাল করছি।’’ বন্ধুর বিয়ে উপলক্ষে মুর্শিদাবাদের শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছেন তুহিনা পরভিন। তিনি জানালেন, ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছেন।
মানসীর বিপদের কথা শুনে আর থাকতে পারেননি। বিয়ের দু’দিন আগেই তাই বন্ধুর কাছে চলে
এসেছেন তিনি।

পাত্র, বিষ্ণু দাস দেগঙ্গার বিপ্লব কলোনির বাসিন্দা। জাহাজে কর্মরত। আমেরিকা থেকে দু্’মাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছেন বিয়ে উপলক্ষে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি তো মানসীকে বিয়ে করছি, টাকা-অলঙ্কারকে তো নয়। ডাকাতির পরে মানসী যতই ভয়ে থাক, বিয়ে ঠিক ভাবে হওয়া নিয়ে আমার কখনওই চিন্তা হয়নি।’’

বিষ্ণুবাবুর বাবা সুকুমার দাস ও মা গৌরী দাসেরও একই কথা। গৌরীদেবী বলেন, ‘‘শাঁখা-সিঁদুর দিয়ে বিয়েটা হলেই হল। আমরা নিজেদের সাধ্যমতো বৌমাকে সাজিয়ে ঘরে তুলব। টাকা-গয়নার জন্য আবার বিয়ে আটকে যায় নাকি? আমরাও তো বাবা-মা।’’

শনিবার সকাল থেকে বাড়িতে আত্মীয়-প্রতিবেশীদের আসতে দেখে মুখে হাসি ফুটেছে মানসীরও। বিকেল থেকে সেই বাড়িতে বাজতে শুরু করে সানাই। সন্ধ্যায় কনের সাজে মানসী বলেন, ‘‘সে দিন ডাকাতির পর থেকে খুব ভয় করছিল। এমন বিপদের পরেও সব কিছু ভাল ভাবে মিটল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন