এগারো বছর পরে ফিরছে বাড়ির ছেলে

যুবকের বাড়ি ফেরার সব আশায় যখন শেষ, তখনই ওয়েস্ট বেঙ্গল হ্যাম রেডিও ক্লাব খুঁজে বের করল যুবকের ঠিকানা। পরিবারের লোকজন তাঁর ছবি দেখে শনাক্তও করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫৮
Share:

সুপারের সঙ্গে জানকী রমন।—নিজস্ব চিত্র

এগারো বছর আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক। আত্মীয়-স্বজনেরা বহু দিন খোঁজাখুঁজি করে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। ছেলেকে নিয়ে যুবকের স্ত্রী-ও শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

Advertisement

যুবকের বাড়ি ফেরার সব আশায় যখন শেষ, তখনই ওয়েস্ট বেঙ্গল হ্যাম রেডিও ক্লাব খুঁজে বের করল যুবকের ঠিকানা। পরিবারের লোকজন তাঁর ছবি দেখে শনাক্তও করেছেন।

জানা গিয়েছে, বছর সাতচল্লিশের যুবকের নাম জানকী রমন। তামিলনাড়ুর ভেল্লুপুরম জেলায় বাড়ি। তিনি এখন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। পরিবারের লোকজন বাড়ি ফিরিয়ে নিতে রওনা দিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘ওই যুবকের ছবি পরিবারের লোকজনের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা চিনতে পেরেছেন। যুবকটিও তাঁর দাদার ছবি দেখে চিনতে পেরেছেন। আমি নিজেও যুবকের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁরা এলে যুবককে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’

Advertisement

কী ভাবে ওই যুবক বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে এলেন?

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বছর আগে অসুস্থ অবস্থায় রেললাইনের পাশে পড়ে ছিলেন যুবক। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। হাসপাতালের ডায়েরিয়া ওয়ার্ডের মধ্যে থাকা নিখোঁজ ব্যক্তিদের ঘরে থাকতেন।

হ্যাম রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানালেন, মাস তিনেক আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তাঁদের জানান। যুবকের সঙ্গে বহু বার কথা বলেন তাঁরা। ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভাষার সমস্যা হচ্ছিল। ঠিক হয়, রেকর্ড করা হবে ওই যুবকের ভাষা। এক নার্সের সহায়তায় যুবকের কথা রেকর্ড করা হয়। বোঝা যায়, তিনি তামিলে কথা বলছেন।

অম্বরীশরা তামিল ভাষা জানা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হ্যামের সদস্য মঞ্জুনাথ এইচ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যুবকের সঙ্গে কথাও বলানোর চেষ্টা হয়।

শুক্রবার যুবককে হাসপাতালের তরফে নতুন জামা দেওয়া হয়। মেজাজ ভাল ছিল তাঁর। সে সময়ে ফোনে যুবকের সঙ্গে কথা বলানো হয় মঞ্জুনাথের। মঞ্জুনাথ তাঁকে বলেন, ‘‘তোর ভাই বলছি। বাড়ি ফিরে আয়।’’ যুবক মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চান। এক মহিলা মায়ের ভূমিকায় কথা চালিয়ে যান যুবকের সঙ্গে। কেঁদে ফেলেন জানকী।

অম্বরীশ তামিলনাড়ুতে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এই কাজে সাহায্য করেছেন ভেল্লুপুরম জেলার পুলিশ সুপার। মোবাইলে ছবি তুলে পাঠানো হয় পরিবারকে। তাঁরা চিনতে পারেন।

অম্বরীশ বলেন, ‘‘আমাদের এখন দায়িত্ব, যুবকের স্ত্রীকে খুঁজে বের করে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া।’’ যুবকটি শ্রমিকের কাজ করতেন। বাড়ি ফিরতে যুবকটিও অপেক্ষায়। বার বার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করছেন বলে জানা গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন