পথচলা: যাত্রী বসিয়ে চলেছেন হিনুফা। নিজস্ব চিত্র
কখনও তাঁকে দেখা গিয়েছে বাগদা চিংড়ির মাথা ছাড়াতে। আবার কখনও তাঁকে দেখা গিয়েছে ছোটখাটো কোনও কাজে। কিন্তু এখন তাঁকে দেখা যাচ্ছে টোটো চালাতে। বসিরহাট টাউন টোটো ইউনিয়নের একমাত্র মহিলা সদস্য হিনুফা খাতুন।
এলাকায় লোকজন ‘টমি’ নামেই এক ডাকে চেনে বছর তিরিশের হিনুফাকে। বাড়ি বসিরহাটের ত্রিমোহণী। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। অনেক কষ্টে মা রহিমা বিবি সংসারের হাল ধরেন। এখন তাঁর বয়স হয়েছে। অসুস্থ। বড় মেয়ে হিসেবে হিনুফাকেই সংসার চালাতে হয়।
কখনও বসিরহাট, বাদুড়িয়া আবার কখনও হাড়োয়া, হাসনাবাদে লাল রঙের একটি টোটো নিয়ে যাত্রী বহন করেন হিনুফা। যাত্রী পেলে অনেকটা পথ যেতেও আপত্তি নেই তাঁর। ভোরে উঠে বাড়ির রান্নাবান্না সেরে সকাল সাড়ে ৬টায় টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। দুপুরে খানিকটা বিশ্রামের শেষে ফের গাড়ি নিয়ে বেরোন। ফিরতে বেশ রাত হয়।
অবিবাহিত এক দিদি গুলফাম খাতুন, মানসিক ভারসাম্যহীন মামা, ছোট ভাই মোরসালিমকে নিয়েই তাঁর জগৎ। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তা-ও চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন হিনুফা। পাড়ার একজনের পরামর্শে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে টোটো কিনেছেন। দিনরাত পরিশ্রম করে যা আয় হয় তার বড় অংশই ব্যাঙ্কের ঋণ মেটাতে শেষ হয়ে যায়। বাকিটা দিয়ে কোনও রকমে সংসার চলে। হিনুফা বলেন, ‘‘সরকারের পক্ষে যদি একটু সাহায্য পেতাম, তা হলে হয় তো অসুস্থ মা এবং মামার চিকিৎসা করা সম্ভব হতো।’’ দিনে দুশো-আড়াইশো টাকা আয় হয় বলে জানালেন। মাস চারেক আগে টোটো চালানোয় হাতেখড়ি হয় তাঁর। জানালেন, প্রথমটায় একটু-আধটু টলমল করত গাড়ি। এখন হাত পেকেছে ভালই।
আইএনটিটিইউসি-র বসিরহাট মহকুমা কার্যকরী সভাপতি বাবুলাল সাধুখাঁ বলেন, ‘‘মহকুমায় প্রায় ৯০০ টোটো চলে। তার মধ্যে মহিলা চালক বলতে এই একজনই। হিনুফার জন্য আমরা গর্বিত। ওই মেয়েটির ব্যবহার এবং সাহসিকতা আমাদের মুগ্ধ করেছে।’’ এ ভাবে যদি আরও মহিলা টোটো কিংবা ই-রিকশা কিনে রাস্তায় চালান, তা হলে কাজের অভাব অনেকটাই মিটবে বলে মনে করেন তিনি।
তবে এখন হিনুফার চিন্তা যদি টোটো বাতিল হয়ে ই-রিকশা কিনবেন কী ভাবে। ফের ঋণ মেলাটা একটু সমস্যার। ইউনিয়নের কর্তারা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, হিনুফার ই-রিকশা কিনতে কোনও অসুবিধা হবে না।