মৌসুমির অভয়, রক্ত দান ফতেমার

মহিলারা দল বেঁধে এসে শিবিরে রক্ত দিয়ে যাচ্ছেন, এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। রবিবার হাবরার রাঘবপুর তেমন দৃশ্যেরই সাক্ষী থাকল। পুরুষদের পাশাপাশি রক্ত দান করলেন, নাজমুন বিবি, নেবার বিবি, লক্ষ্মী ঘোষেরা। শুধু রক্তদানই নয়, স্থানীয় কালীতলা মিলন সঙ্ঘের মাঠে দাঁড়িয়ে কার্যত পিকনিকের মেজাজে কাটালেন তাঁরা। 

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবরা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৩
Share:

পাশাপাশি: রক্তদান শিবিরে পাড়ার মেয়েরা। নিজস্ব চিত্র

শরীরে সূচ বিঁধবে! ভয়েই অস্থির ফতেমা বিবি। শয্যায় শুয়ে কাঁপছিলেন তিনি। এ দিকে হাতে সূচ নিয়ে অপেক্ষায় টেকনিশিয়ান যুবক মিটিমিটি হাসছেন।

Advertisement

‘আপনি না হয় একটু ঘুরে আসুন। পরে রক্ত দেবেন’। টেকনিশিয়ানের এমন কথায় ঝাঁঝিয়ে উঠলেন মাঝবয়সি ফতেমা বিবি— ‘‘না হয় একটু ভয় পেয়েছি। তা বলে তুলে দেবে?’’ ততক্ষণে তাঁর শয্যার এক প্রান্তে এসে বসেছেন, মৌসুমি ঘোষ। তিনি অভয় দিয়ে বললেন, ‘‘ভয় কী গো দিদি। এই দ্যাখো, আমি তো রক্ত দিয়ে উঠলাম। কোনও চিন্তা নেই।’’ মৌসুমিদেবীর হাত শক্ত করে ধরে টেকনিশিয়ানকে ফতেমা বিবি বললেন, ‘‘এ বার নাও রক্ত। কোনও ভয় নেই।’’ ফতেমার রক্ত জমা হতে থাকল প্লাস্টিক পাউচে।

পাড়ায় পাড়ায় রক্তদান এখন নেহাতই সাধারণ ঘটনা। কিন্তু, মহিলারা দল বেঁধে এসে শিবিরে রক্ত দিয়ে যাচ্ছেন, এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। রবিবার হাবরার রাঘবপুর তেমন দৃশ্যেরই সাক্ষী থাকল। পুরুষদের পাশাপাশি রক্ত দান করলেন, নাজমুন বিবি, নেবার বিবি, লক্ষ্মী ঘোষেরা। শুধু রক্তদানই নয়, স্থানীয় কালীতলা মিলন সঙ্ঘের মাঠে দাঁড়িয়ে কার্যত পিকনিকের মেজাজে কাটালেন তাঁরা।

Advertisement

উদ্যোক্তাদের পক্ষে এবাদুল হক, রাহুল ঘোষরা জানালেন, এদিন ৫৫ জন রক্তদান করেছেন। তার মধ্যে ২৫ জন মহিলা। তখনও অপেক্ষায় ছিলেন আরও অনেকেই। এ দিন রক্তদান করা ফতেমা বিবি, নাজমুন বিবি, মৌসুমি ঘোষেরা বললেন, ‘‘আমাদের দান করা রক্ত কাজে লাগবে জেনেই ভাল লাগছে।’’

তবে, এমন অভিনব রক্তদান শিবিরের পিছনে একটি কারণও রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাঘবপুর এবং সংলগ্ন এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকবার নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। উত্তেজনাও তৈরি হয়েছিল। অবস্থা এমন দাঁড়ায়, যে একে অন্যকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেন। তখন এলাকার কিছু বাসিন্দা এগিয়ে এসে বিবদমান দুই গোষ্ঠীকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। সমস্যা মেটে। দেখা যায়, এত দিন যা শোনা যাচ্ছিল, তার অনেকটাই রটনা। তখনই রক্তদান শিবিরের পরিকল্পনা হয়।

এ দিন রক্তদান শিবিরে এসেছিলেন হাবরার বিডিও শুভ্র নন্দী ও স্থানীয় থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়। রক্তদাতা বিশ্বজিৎ ঘোষ, মহম্মদ সাহিদুলেরা বলছিলেন, আমরা বরাবরই শান্তিতে বাস করি। বাইরের কিছু লোক মিথ্যা রটিয়ে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমাদের নিজেদের বোঝাপড়া এতটাই ভাল যে, তা বুঝতে সময় লাগেনি। আমরা সব সময়ে একে অন্যেরের বিপদে-আপদে ছুটে যাই।’’

শিবির তখনও শেষ হয়নি। মাঠে নাজমুনদের সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন মৌসুমিদেবী। এক সঙ্গে বাড়ি ফিরবেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এলেন তাঁরা। মৌসুমি তাড়া দেন, ‘‘চল, কত কাজ পড়ে আছে বাড়িতে।’’ নাজমুন বললেন, ‘‘যাব তো। ক্যাম্প থেকে যে খাবার দিয়েছে তা খেয়ে নিই।’’

দেখা গেল, নাজমুনের প্যাকেট থেকে একই কলা-ডিম ভাগ করে খাচ্ছেন মৌসুমি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন