মাঠে ঘেমে রোজগার গিন্নিদের

কিছুটা হলেও অভাব ঘুচেছে। মেয়ে রিমি একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলের বয়স পাঁচ। অবসর সময়ে সেলাইয়ের কাজও করেন কৌশল্যা।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০১:৪৪
Share:

কাজের-আনন্দ: বনগাঁর মণিগ্রামে মাঠে নেমে পড়েছেন মহিলারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

ধান, সর্ষে, আনাজ— যতদূর চোখ যাবে, দেখা যাবে মাঠ ভরা এ সব ফলনে। যার পিছনে ঘাম ঝরিয়েছে স্থানীয় মহিলারাই।

Advertisement

বনগাঁয় বছর চারেক ধরে আনাজ-ধান চাষ করে স্বনির্ভর হয়েছেন এঁরা। জমি লিজে নিয়ে চাষ করেন তাঁরা। গোষ্ঠীর মহিলারা নিজেরা টাকা দিয়ে তহবিলও তৈরি করেছেন। ওই টাকা দিয়ে শুরু হয় চাষ। গোষ্ঠীতে যে সমস্ত মহিলারা নেই, তাঁরাও প্রয়োজনে সেখান থেকে ঋণ নিতে পারেন।

২০০৯ সালে ‘জাগরণী কৃষক গোষ্ঠী’ নামে স্বনির্ভর দলটি তৈরি হয়। দলের কর্ণধার স্বপ্না মণ্ডল জানান, স্বামীদের চাষবাসে তাঁরা হাত লাগাতেন অনেকেই। ফলে অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু পুরুষদের সাহায্য না নিয়ে মেয়েদের এই উদ্যোগের তারিফ করছেন সকলে।

Advertisement

কৃষি দফতর থেকেও প্রশিক্ষণ মিলেছিল। স্বপ্নার কথায়, ‘‘সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিই, স্বামীদের পাশাপাশি আমরাও যদি চাষ করে কিছু টাকা রোজগার করতে পারি, তা হলে সংসার চালাতে সুবিধা হবে।’’ সেই শুরু। তারপর থেকে গ্রামের বহু মহিলা গোষ্ঠীতে যোগদানের সুবাদে নিজেরা চাষের কাজে হাত পাকিয়েছেন।

কৌশল্যা তরফদারের কথাই ধরা যাক। বছর তিনেক আগে মণিগ্রামের বাসিন্দা কৌশল্যার স্বামী মারা যান। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাবেন, ভেবে কুল করতে পারছিলেন না মহিলা। পরে চাষের কাজে যোগ দেন। কিছুটা হলেও অভাব ঘুচেছে। মেয়ে রিমি একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলের বয়স পাঁচ। অবসর সময়ে সেলাইয়ের কাজও করেন কৌশল্যা।

তাঁর মতোই সতেরোজন মহিলা এখন চাষবাস করে স্বনির্ভর হয়েছেন। স্বপ্না মণ্ডল, সুলতা মণ্ডল, শ্যামলী মণ্ডল, অঞ্জলি মণ্ডল, হীরা বিশ্বাস, নীলিমা মণ্ডলেরা সংসারে টাকা দিতে পারছেন। স্বপ্নাদেবী জানালেন, কৃষি দফতর থেকে তাঁদের বিনামূল্যে বীজ ও জৈব সার দিয়ে সাহায্য করা হয়। খরচ বাদ দিয়েও চাষ থেকে প্রত্যেকে গড়ে দশ হাজার টাকা রোজগার করছেন।

স্বামীরাও খুশি। স্বপ্নাদেবীর স্বামী শুকদেববাবু বলেন, ‘‘একার রোজগারে সংসার চালানো আজকের দিনে খুব কঠিন। স্ত্রী পাশে দাঁড়ানোয় অনেক সুরাহা হচ্ছে।’’ শ্যামলী মণ্ডলের ছেলে দিব্যেন্দু গুজরাতে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়েন। ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে তাঁর রোজগার কাজে আসছে বলে জানালেন শ্যামলী।

জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) অরূপ দাস বলেন, ‘‘মহিলাদের কৃষিকাজে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। গ্রামের অর্থনীতিও বদলে যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন