ছেলে-স্বামীর কফিন নিয়ে চললেন আসমা

ক্যান্সারে মারা গিয়েছে একমাত্র সন্তান। পেট্রাপোল বন্দরে ছেলের কফিন আগলে বসেছিলেন বাবা। চোখের জল বাঁধ মানছে না। শরীর যেন ক্রমে নেতিয়ে পড়ছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৮
Share:

শেষ-দেখা: ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সোমবার ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক

ক্যান্সারে মারা গিয়েছে একমাত্র সন্তান। পেট্রাপোল বন্দরে ছেলের কফিন আগলে বসেছিলেন বাবা। চোখের জল বাঁধ মানছে না। শরীর যেন ক্রমে নেতিয়ে পড়ছে। কোনও মতে উঠে যাচ্ছিলেন শৌচালয়ের দিকে। সেখানে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যান।

Advertisement

আত্মীয়-স্বজন বলে তখন কেউ নেই আসমা বিবির পাশে। সদ্য সন্তানকে হারিয়ে যিনি স্বামীর মৃত্যুরও সাক্ষী থাকলেন সোমবার।

ঢাকার গাজিপুরে সম্পন্ন চাষি ছিলেন মহম্মদ রফিক (৪৫)। কিন্তু দশ বছরের ছেলে আসাদ মণ্ডলের ক্যানসার ধরা পড়়ার পর থেকে টাকা-পয়সা তলানিতে এসে ঠেকেছিল। সে দেশে চিকিৎসায় বহু টাকা ব্যয় করে শেষে জমিজমা বন্ধক রেখে ছেলেকে নিয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। রবিবার সেখানেই মারা যায় আসাদ।সোমবার পেট্রাপোল বন্দরে ছেলের কফিন নিয়ে পৌঁছন বাবা-মা। অপেক্ষা করছিলেন ভিসার জন্য। যা এক আত্মীয়ের নিয়ে পৌঁছনোর কথা সেখানে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ছেলের কফিনের কাছ থেকে সরানোই যাচ্ছিল না রফিককে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে পাশেই বসেছিলেন তিনি। আর থেকে থেকে চোখ মুছছিলেন।

Advertisement

পুত্রশোকে অসুস্থ মনে হচ্ছিল তাঁকে। বন্দরের শৌচালয়ের এক কর্মী রামেশ্বর তাঁর হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন শৌচালয়ের দিকে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন রফিক। মাথা ঘুরে পড়ে যান। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোতে থাকে। রামেশ্বরই তাঁকে উদ্ধার করে একটি ভ্যানে চাপিয়ে বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। সঙ্গে আসমা। হতবুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন যেন মহিলা। স্বামীকে নিয়ে রওনা দেন হাসপাতালের দিকে। অভিবাসন দফতরের এক কোণে তখন পড়ে নিঃসঙ্গ একখানা কফিন।

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন রফিককে। আলুথালু অবস্থা আসমার। অনেক পরে পৌঁছন আত্মীয়-স্বজনেরা। দেহ ময়না-তদন্ত হবে। কফিন রাখা হয়েছে পেট্রাপোল থানায়। সেখানেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে আসমার। ফ্যালফ্যালে চোখে মহিলা বললেন, ‘‘দু’দুটো কফিনের ভার এখন কী ভাবে বইব আমি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন