ধৃতেরা: হামলাকারী তিনজন (বাঁ দিক থেকে)। নিজস্ব চিত্র
মহিলাদের উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহসের জেরে রিভলভার হাতে বাড়িতে ঢুকে এক ব্যবসায়ীকে খুনের হুমকি দিতে গিয়ে ধরা পড়ল মদ্যপ তিন দুষ্কৃতী।
শনিবার দুপুরে মিনাখাঁর বৈদ্যআটি গ্রামে নিরঞ্জন মণ্ডলের বাড়িতে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। বেঁধে রেখে গণধোলাইয়ের পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় দুষ্কৃতীদের। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম মাহাবুর গাজি, আনন্দ মণ্ডল ও ঝন্টু গাজি ওরফে খোকন। গুলি-ভর্তি রিভলভার উদ্ধার হয়েছে তাদের কাছ থেকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মিনাখাঁর ধুতুরদহ পঞ্চায়েতের দেউলি বাজারের কাছে মণ্ডল পরিবারের দান করা আড়াই বিঘা জমির উপরে প্রায় সত্তর বছর আগে গড়ে ওঠে শ্মশান। সেখানে জমি দখল করে দোকান ঘর করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ। তা জানতে পেরে জমি ঘিরে তারকাঁটার বেড়া এবং কিছুটা ইটের পাঁচিল দেওয়া হয়। দুষ্কৃতীরা বেড়া ভেঙে জমি দখলের চেষ্টা করলে রুখে দাঁড়ান নিরঞ্জনবাবু।
জমি দখলের চেষ্টা হচ্ছে বলে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জানান। সেই মতো তদন্ত শুরু হয়। শ্মশানের জন্য সংরক্ষিত জমি যাতে বেদখল না হয়, সে জন্য প্রশাসনের কর্তাদের জানানোর পাশাপাশি গ্রামবাসীদের থেকে সই সংগ্রহ শুরু হয়। অভিযোগ, এতে আরও খেপে যায় প্রোমোটারেরা। নিরঞ্জনবাবুকে হুমকি দেওয়া শুরু হয়।
শনিবার বেলা ১টা নাগাদ দুপুরের খাওয়া সেরে সবে ঘরে ঢুকেছেন নিরঞ্জনবাবু। হঠাৎ মোটর বাইকে চেপে তিন মদ্যপ হাজির হয়। সকলের হাতে রিভলভার। একজন বাইকে বসে থাকে। বাকিরা টলতে টলতে নিরঞ্জনবাবুকে খুনের হুমকি দিয়ে বাড়িতে ঢোকে।
বিপদ বুঝে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পালান ওই ব্যক্তি। দুষ্কৃতীরা হাতের সামনে যাকে পায়, তাকেই ধাক্কাঝাক্কা, মারধর করে। একের পর এক ঘরে ঢুকে দুষ্কৃতীরা খুঁজতে থাকে নিরঞ্জনবাবুকে। সঙ্গে অশ্রাব্য গালিগালাজ চলতে থাকে। ভাতের হাঁড়ি, আসবাবপত্র তছনছ করে হামলাকারীরা।
মণ্ডল পরিবারের মহিলারা প্রথমটায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে দুষ্কৃতীদের ধরার কথা ভাবেন।
দুষ্কৃতীরা যখন দোতলার ঘরে খোঁজাখুঁজিতে ব্যস্ত, সে সময়ে নীচের ঘরের দরজা বাইরে থেকে শিকল তুলে দেন মহিলারা। দুষ্কৃতীরা আটকা পড়ে।
মণ্ডল পরিবারের প্রায় ২০-২৫ জন সদস্য। তাঁরাই দুষ্কৃতীদের ধরে ফেলেন। চিৎকার-চেঁচামেচিতে জড়ো হন পড়শিরা। মোটর বাইক নিয়ে পালাতে গিয়ে বাইরে থাকা দুষ্কৃতীও জনতার হাতে ধরা পড়ে। নিরঞ্জনবাবুর স্ত্রী দিপালী মণ্ডল, ভাইয়ের স্ত্রী লালি মণ্ডলদের বক্তব্য, ‘‘দুষ্কৃতীদের সামনে প্রথমটায় অসহায় লাগছিল। খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে মনে হল, রুখে না দাঁড়ালে ভুল করব।’’
তিনজনকে বেঁধে রেখে শুরু হয় গণধোলাই। মারের মুখে দুষ্কৃতীরা জানায়, এক প্রোমোটার তাদের পাঠিয়েছে। বলেছে, নিরঞ্জনবাবুকে চমকে-ধমকে বা গুলি চালিয়ে জমি আদায় করতে পারলে ২ লক্ষ টাকা দেবে।
নিরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘পিতৃপুরুষের জমিতে শ্মশান গড়ে উঠেছিল। সেখানে দোকান ঘরের জন্য প্রোমোটিং হবে, তা মানতে পারেনি।’’ ঘটনার পর থেকে তাঁরা আতঙ্কিত, জানিয়েছেন গৃহকর্তা।
এ দিকে, ধরা পড়ে এক দুষ্কৃতী কবুল করেছে, সব ঠিকঠাকই চলছিল। নেশাটা মাত্রা ছাড়ানোয় হিসেবে ভুল হয়ে গিয়েছে!