তৎপর: চলছে পুকুর উদ্ধারের কাজ। সোমবার, খড়দহে। নিজস্ব চিত্র
পুকুর খুঁড়ছে খড়দহ পুরসভা। জোর কদমে চলছে কাজ। তবে এ পুকুর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের ‘জল ধর, জল ভর’ প্রকল্পের নয়। যদিও এর পিছনে মুখ্যমন্ত্রীরই ভূমিকা রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
খড়দহ পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও পুকুরই নতুন করে খোঁড়া হচ্ছে না। যে সব পুকুর ভরাট করা হয়েছিল, সেগুলিকে ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। তাই পুকুর উদ্ধারে আপাতত ব্যস্ত খড়দহ পুরসভা।
অভিযোগ, পুকুর ভরাট নিয়ে প্রশাসনের দোরে কড়া নেড়ে কাজ হয়নি। তাই সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে নালিশ ঠুকেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সব অভিযোগপত্র উত্তর ২৪ পরগনার জেলা শাসকের দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনকে সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, সম্প্রতি পুরসভার অন্তর্গত সাতটি ওয়ার্ডের মোট ১৪টি পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পুর কর্তৃপক্ষকে লিখিত নির্দেশ দেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। পুকুরের সংখ্যা দেখে অবাক পুর-আধিকারিকেরাও। এত পুকুর যে বেমালুম বাস্তু জমিতে পরিণত হয়ে গিয়েছে, তা জানা ছিল না তাঁদেরও।
জেলা শাসকের নির্দেশ পাওয়ার পরে সোমবার পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার সুশান্ত মণ্ডল এবং স্যানিটারি ইনস্পেক্টর সোমনাথ পাত্রের নেতৃত্বে একটি দল সাত নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণনগরে যায়। সেখানকার যে পুকুরটি বোজানোর অভিযোগ উঠেছিল। তা পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করা হয় এ দিনই।
পুরসভা সূত্রের খবর, উদ্ধারের তালিকায় সাত নম্বর ওয়ার্ডের পাশাপাশি পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে দু’টি, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে তিনটি করে মোট ছ’টি এবং ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি করে পুকুর রয়েছে। আর একটি ওয়ার্ডে জলাশয়ের কতটা বোজানো হয়েছে, তা এখনও চিহ্নিত হয়নি।
ভূমি রাজস্ব দফতরের কাছে থাকা মানচিত্র দেখে পুকুর উদ্ধারের তালিকা তৈরি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। এর মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পুষ্পমেলা অফিসের পাশে বোজানো জলাশয়টি ‘স্পর্শকাতর’ বলে মনে করছেন খোদ পুরকর্তৃপক্ষই। সেখানে গোলমালের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, বোজানোর পরে ওই জলার চরিত্র বদলে ‘বাস্তু’ পর্যন্ত করিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে পুর চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সেটি উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুকুর বুজিয়ে একের পর এক বহুতল নির্মাণের চেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এস কে ব্যানার্জি রোডে এ ভাবেই পুকুর বুজিয়ে বহুতল নির্মাণ হয়েছে। কল্যাণনগরে পুকুর উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে দেখে স্থানীয় বাসিন্দা কৌশিক বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুকুর বুজে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে এলাকায় জল জমে যাচ্ছে। ডেঙ্গির উপদ্রবও বাড়ছে।’’
উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘শুধুমাত্র খড়দহ নয়, পুকুর ভরানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সবর্ত্রই এলাকাটি আগের অবস্থায় ফেরানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশের বিষয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি।
খড়দহের পুর চেয়ারম্যান তাপস পাল বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশমতো কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বুধবার আরও একটি পুকুর উদ্ধারের কাজ শুরু হবে।’’ তিনি জানান তৃণমূল জমানায় মাত্র চারটি পুকুর ভরাট হয়েছে। সেগুলিই আগের অবস্থায় ফেরানো হবে। তা হলে বাকিগুলির কী হবে? তাপসবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘বাম আমলে ভরাট হওয়া পুকুরের আমরা কী করব?’’ জেলা প্রশাসন যদিও বলছে, পুরসভারই ওই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে।