রাস্তার উপরেই সিমেন্ট গোলা চলছে। হুঁশ নেই প্রশাসনের। গোপালনগরে ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।
রাস্তার এক দিকে পড়ে রয়েছে ইমারতি সামগ্রী। অন্য দিকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রাক। কোথাও কোথাও আবার রাস্তার উপরেই পড়ে আস্ত গাছের গুঁড়ি। কোনও গ্রামের রাস্তা নয়। বনগাঁ-চাকদহ রাজ্য সড়কে এই ছবি অতি পরিচিত।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ-চাকদহ রাজ্য সড়কের প্রায় ১৭ কিলোমিটার বনগাঁ থেকে গোপালনগরের কদমতলা পর্যন্ত বিস্তৃত। বাকি রাস্তা রয়েছে নদিয়া জেলায়। উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার মধ্যে সড়ক পথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই রাস্তা। যশোর রোডের যানজট এড়াতেও অনেকে এই রাস্তা ব্যবহার করে বারাসতে অথবা কলকাতায় আসেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্য থেকে পণ্য-ভর্তি ট্রাক এই রাজ্য সড়ক ধরেই পেট্রাপোল বন্দরে যায়। বছর ছয়েক আগে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ঋণের টাকায় এই সড়কটির সংস্কার এবং সম্প্রসারণ করা হয়। তারপর বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু সম্প্রসারিত রাস্তার সুবিধা মিলছে কই! রাস্তার দু’পাশ জুড়ে তো শুধুই ইট, বালি, পাথর, খোয়ার স্তূপ।
স্থানীয় পোলতা থেকে সাতবেড়িয়া এলাকা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ জুড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল ট্রাক। গোপালনগর বাজারে রাস্তার উপরেই রাখা ইট। এছাড়াও রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মোটরবাইক, অটো, ইঞ্জিনভ্যান, ম্যাটাডর। গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশনের সামনেও ট্রাকের সারি। সনেকপুরে গোপালনগর স্টেশন ঢোকার মুখে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে রয়েছে অটো এবং ট্রাক। একই ছবি গোপালনগর রেলগেট এলাকায়। বনগাঁর চাঁপাবেড়িয়া, বনবিহারী কলোনি এলাকায় রাজ্য সড়কের উপরেই চোখে পড়ল বাসস্ট্যান্ড। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সামনে রয়েছে অটো স্ট্যান্ড। বনগাঁ শহরের ভিতরেও এই রাস্তার দখলদারির চেনা ছবির কোনও বদল চোখে পড়ল না।
নদিয়ার চাকদহের দিকে যত এগিয়েছি এই ছবি ততই বেড়েছে। বন্ধনবেড়িয়া বাজার, আকাইপুর মোড়, মেদিয়া বাজার, মানিক কোল, কদমতলা দশমাইল— প্রায় সর্বত্রই এই রাজ্য সড়কের উপর ফেলা রয়েছে বালি, ইট, পাথর। কানসোনা এলাকায় দেখা গেল রাস্তার উপরেই পাথর, বালি মাখানোর কাজ করছেন রাজমিস্ত্রিরা। শিউলিপুকুর এলাকায় চোখে পড়ল ডাঁই করে রাখা রয়েছে মাটি। সব জায়গাতেই খাতায়-কলমে রাস্তা চওড়া হলেও বাস্তবে রাস্তা ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষ নিজেদের ইমারতি ব্যবসার জন্য রাজ্য সড়কের উপরে ইট, বালি, পাথর রেখে রাখছেন। এ ছাড়াও, দিনের পর দিন রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা ওভারলো়ডিং ট্রাক থেকে ডিজেল চুঁইয়ে পড়ছে। ক্ষতি হচ্ছে রাস্তার। দিন কয়েক আগে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ রাতের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি ট্রাকে ভাঙচুর চালান। তারপর কয়েক দিনের জন্য ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকা কমে গেলেও তারপর আবার যে কে সেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দার প্রশ্ন, রাজ্য সড়কের উপর ইমারতি দ্রব্য পড়ে রয়েছে। দিনের পর দিন ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাস্তা সরু হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ কী করছে?
বনগাঁর মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘সড়কের উপর ইমারতি মালপত্র ফেলে রাখার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এসেছে। উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’
সেই পদক্ষেপের অপেক্ষায় দিন গুনছে রাজ্য সড়কের কালো পিচ।