দেনার দায়ে পোষা দুই কুকুরকে মেরে আত্মঘাতী 

পুলিশ জানিয়েছে, মাস কয়েক আগে ঋণ নিয়ে একটি অটো কেনেন। কিন্তু কিস্তির টাকা দিতে না পারায় সেই অটো নিয়ে চলে যায় ঋণদানকারী সংস্থাটি।

Advertisement

সমীরণ দাস 

জয়নগর শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০২:৪৫
Share:

শুভঙ্করের (ইনসেটে) দেহের পাশে বসে আছেন পম্পা। ছবি: সুমন সাহা

কাকভোরে হঠাৎ পর পর গুলির শব্দে কেঁপে উঠেছিল জয়নগরের নারায়ণীতলার চৌধুরীপাড়া এলাকা। গুলির শব্দে দৌড়ে এসে পড়শিরা দেখেন, পুরনো আমলের বনেদি বাড়ির একতলার দালানে পড়ে রয়েছে বাড়ির মালিক শুভঙ্কর রায়চৌধুরীর (৪৭) দেহ। পাশেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে পোষা অ্যালশেসিয়ান। কিছুটা দূরে রক্তে ভাসছে আরও এক পোষ্য ধবধবে সাদা স্পিৎজ। পাশেই পড়ে আছে একনলা লম্বা বন্দুক। আশেপাশে ছড়িয়ে গোটা তিনেক কার্তুজের খোল।

Advertisement

খবর যায় থানায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, বাড়িতে থাকা একনলা বন্দুক দিয়ে প্রিয় দু’টি কুকুরকে মেরে আত্মহত্যা করেছেন শুভঙ্কর। চোয়ালের নিচে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালায় সে। দেনার দায়েই আত্মহত্যা বলে জানায় পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বন্দুকটি শুভঙ্করদের পরিবারে ছিল। তাঁর বাবার নামে লাইসেন্স ছিল বন্দুকের। বাবার মৃত্যুর পর শুভঙ্করের তত্ত্বাবধানেই ছিল বন্দুকটি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনেদি বাড়ির ছেলে শুভঙ্কর। স্ত্রী ও একটি কন্যাসন্তান রয়েছে তাঁর। বিয়ের বহু দিন পর বছর দুয়েক আগে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন শুভঙ্করের স্ত্রী। বেশ কয়েক মাস ধরে দেনার দায়ে জর্জরিত ছিলেন শুভঙ্কর। সেই কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। স্থানীয় বসিন্দারা জানান, কুকুরদু’টিকে খুব ভালবাসতেন শুভঙ্কর। কুকুরের বাচ্চা বিক্রি করতেন। সম্প্রতি প্রচুর খরচ করে কুকুরের প্রজনন করিয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি কুকুরের বাচ্চাও হয়েছিল। কিন্তু সবকটিই মারা যায়।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মাস কয়েক আগে ঋণ নিয়ে একটি অটো কেনেন। কিন্তু কিস্তির টাকা দিতে না পারায় সেই অটো নিয়ে চলে যায় ঋণদানকারী সংস্থাটি। এরপর অন্য একজনের কাছ থেকে অটো ভাড়া নিয়ে চালাতেন শুভঙ্কর। সংসার চালাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশ কিছু টাকা ধার করেছিলেন তিনি। কিন্তু আর্থিক অনটনে শোধ করতে পারেননি। সেই সব কারণেই এই পরিণতি বলে ধারণা স্থানীয় বসিন্দাদের।

শুভঙ্করের স্ত্রী পম্পা এ দিন জানান, প্রতিদিনের মতই ভোরবেলা ঠাকুরের পুজো দিতে দোতলা থেকে একতলায় নেমে আসেন শুভঙ্কর। পম্পা ওই সময় ওপরের ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। এরপর পরপর বন্দুকের আওয়াজ পেয়ে পম্পা নীচে এসে দেখেন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন শুভঙ্কর এবং দু’টি কুকুর।

স্থানীয় বাসিন্দা প্রণব ঘোষ বলেন, ‘‘ভোরবেলা গুলির আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে এসে দেখি, এই অবস্থা। শুনেছি প্রচুর ধারদেনা হয়ে গিয়েছিল। মাঝে কিছুদিনের জন্য বাইরেও চলে গিয়েছিল। তারপর অটো চালাচ্ছিল। সেটাও টাকা শোধ করতে না পারায় চলে যায়। তার জন্যই মনে হয় এই সিদ্ধান্ত। এই পরিণতি হবে ভাবতেই পারিনি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, শুভঙ্কর ও কুকুরদু’টির দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। যে বন্দুকটি দিয়ে গুলি করা হয়েছে, সেটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেটির লাইসেন্সও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন