দু’দল দুষ্কৃতীর মধ্যে এলাকা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে তাণ্ডব চলল অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকায়।
অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ একটি মোটর বাইকে এসে তিন দুষ্কৃতী সূরজ দে নামে এক দুষ্কৃতীর বাড়িতে বোমাবাজি করে। তারপর শূন্যে গুলি চালাতে চালাতে পালিয়ে যায়। পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি দুষ্কৃতী কার্যকলাপ। কয়েক জন দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা মাঝে মধ্যেই প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব করছে। অথচ পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না। পুলিশের অবশ্য দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক জন দুষ্কৃতীকে মাদক পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা জেলে রয়েছে। এলাকায় দুষ্কৃতীরা থাকে না। বাইরে থেকে ঢুকে মাঝে মধ্যে ঝামেলা পাকাচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণগড় বাজার এলাকার বাসিন্দা সূরজের বিরুদ্ধেও তোলাবাজি, মারধর, ডাকাতির মতো নানা অপরাধমূলত কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জুলাই মাসে পুলিশ তাকে স্থানীয় গুমা বাজার এলাকা থেকে ২২ কেজি গাঁজা পাচারের সময়ে গ্রেফতারও করা হয়। সে আপাতত জেলহাজতে। সূরজ স্থানীয় দুষ্কৃতী গোপাল দে ওরফে ছুঁচো গোপালের দলের সদস্য। গোপালের ডানহাত হিসাবেই তার ‘খ্যাতি’। গত ৪ জানুয়ারি পুলিশ গোপালকেও গাঁজা পাচারের সময়ে গ্রেফতার করেছে। সে-ও জেলহাজতে। তার গ্রেফতারের প্রতিবাদে এলাকার কিছু মহিলা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
সূরজ সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য প্রকাশ্যে কোনও অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিল না। নিজের ভাবমূর্তি ভাল রাখতে সে পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেকারি পট্টিতে প্রতি বছর বড় করে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করে। বস্ত্র বিতরণও করে। সূরজের স্ত্রী পিঙ্কি পুলিশের কাছে এলাকার দুষ্কৃতী বলাই দে ওরফে ছোট বলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযযোগ, একটি মোটর বাইকে তিন জন দুষ্কৃতী এসেছিল। ঘটনার সময়ে বাড়িতে পিঙ্কি তার দুই মেয়েকে পড়াচ্ছিলেন। দুষ্কৃতীরা বাড়ির সিঁড়িতে বোমা মারে। এলাকর কিছু যুবক চলে এলে দুষ্কৃতীরা শূন্যে প্রায় ৮ রাউন্ড গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
হঠাৎ কেন সূরষের বাড়িতে হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা?
পুলিশ ও এলাকার মানুষের একাংশের অনুমান, সূরজ-গোপাল জেলে থাকায় এলাকা এখন ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। তাদের দাপটে বলাই এলাকায় ঢুকতে পারত না। ফলে ওদের জেলে থাকার সুযোগে এলাকার দখল নিতেই হামলা হয়েছে। তোলাবাজির মোটা টাকার দখল রাখাই আসল উদ্দেশ্য। অভিযোগ, বাম বা ডান কোনও আমলেই তোলাবাজির ঘটনা থেমে থাকেনি। আরও অভিযোগ, পুলিশকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখেছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই।
অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের সত্যসেবী কর বলেন, “দুষ্কৃতী হামলার ঘটনা এখন অশোকনগরে নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষকেই এ বার দুষ্কৃতীদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে।” এলাকার বিধায়ক তৃণমূলের ধীমান রায় বলেন, “দু’দল দুষ্কৃতীর মধ্যে চোলাই-সাট্টার দখল নিতে লড়াইয়ের জেরে ওই ঘটনা ঘটেছে। গত দশ বছর ধরেই ওই লড়াই চলছে। ওরা সবই সিপিএমের হাতে তৈরি। পুলিশকে বলা হয়েছে, দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে।”
কিন্তু তাতেও যে পাকাপাকি ভাবে শান্তি ফিরবে, এমন আশা করছেন না এলাকার বেশির ভাগ মানুষ জন।