বিপজ্জনক হয়ে ঝুলে রয়েছে তিনটি জেটিঘাটই। নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নামখানার হাতানিয়া দোহানিয়া নদীর সংযোগকারী ঘাট দিয়েই ট্রলার থেকে মাছ ওঠানো নামানোর কাজ চালাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু উদাসীন প্রশাসন।
২০০৪ সালে নামখানা পঞ্চায়েত সমিতি থেকে হাতানিয়া দোহানিয়া নদী থেকে ট্রলার থেকে মাছ ওঠানো নামানোর জন্য নামখানা বাজারের পাশে পরপর তিনটি কংক্রিটের স্ল্যাব ফেলে ঘাট তৈরী করা হয়েছিল। ট্রলার থেকে মাছ ওঠানো নামানোর কাজে যুক্ত শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্য ঘাটের পাশে একতলা ভবনও তৈরি করা হয়। নাম দেওয়া হয় নেতাজি সুভাষ মৎস্য বন্দর। তারপর থেকে এলাকার ২০০ থেকে ২৫০ ট্রলার গভীর সমুদ্র থেকে মাছ নিয়ে এসে ওই ঘাটেই তা ওঠায় নামায়। সেখান থেকে গাড়িতে করে তা চলে যায় ডায়মন্ড হারবারের মাছের আড়তে। এ ছাড়াও, গভীর সমুদ্রে যাওয়ার আগে ওই ঘাট থেকেই বরফ, জ্বালানি তেল, মৎস্যজীবীদের খাবার তোলা হয়। দিঘা, শঙ্করপুর, রায়দিঘি, কুলতলি, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, বকখালি মৎস্যবন্দরে ভাটার সময়ে ট্রলার ঢুকতে না পারলেও নামখানার ওই ঘাটে হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর গভীরতা বেশি থাকায় ভাটার সময়েও অনায়াসে ট্রলার ঢুকতে পারে। অথচ এখনও পর্যন্ত উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। তিনটি জেটি ঘাটেই একেবারেই বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে। মৎস্যজীবীরা নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই ঘাট দিয়েই ট্রলার থেকে মাছ ওঠানো নামানোর কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা নামখানায় হাতানিয়া দোহানিয়া নদী সংযোগ ওই ঘাটে ওঠানামা করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নামখানায় এখনও পর্যন্ত কোনও মৎস্য বন্দর গড়ে ওঠেনি। অথচ ওই এলাকায় বেশির ভাগই মৎস্যজীবীদের বাস। ফলে এলাকার ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরে ফিরে আসার পরে ট্রলার থেকে মাছ তুলে বাজারে পাঠানোর জন্য কোনও স্থায়ী ঘাটের ব্যবস্থা ছিল না। ওই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারি নির্দেশ মতো ইলিশ মাছ ধরার মরসুম শুরু হয় পয়লা জুন থেকেই। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে তিনটি ঘাট সংস্কার না হওয়ায় ঘাট প্রায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হাতানিয়া দোহানিয়া নদীর জোয়ারের জলের তোড়ে ঘাটের কংক্রিটের স্ল্যাব ভেঙে ঝুলে পড়েছে। তা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে ওই ভেঙে পড়া ঘাটেই মাছ ওঠানামার কাজ করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। ওঠানামা করতে গিয়ে একটু অসাবধান হলেই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে।
সমস্যা সেখানেই শেষ নয়। মাছের মরসুমে ২৪ ঘণ্টা ধরে ওই তিনটি ঘাট ব্যবহার হলেও ঘাট লাগোয়া মাঠে ভাল আলোর ব্যবস্থা নেই। মাছ বহনকারী গাড়ি রাখার জন্য ওই মাঠটির অবস্থাও বেহাল। বড় বড় খানাখন্দে ভরে গিয়ে তাতে জল জমে ডোবার আকার নিয়েছে। পানীয় জলের একটাই মাত্র নলকূপ রয়েছে। নেই কোন শৌচাগারের ব্যবস্থায় অথচ মাছ ওঠানামার কাজে প্রায় ৪০০ শ্রমিক নেতাজী সুভাষ বন্দর নামে ওই ভবনেই বসবাস করলেও তাদের পরিষেবার কোনও ব্যবস্থা নেই। অথচ জেলা জুড়ে গড়ে ওঠা অন্যান্য মৎস্য বন্দরে ভাটার সময় গভীর সমুদ্র থেকে ফিরে আসা ট্রলার ঢুকতে না পারলেও নামখানা ঘাটে অনায়াসে ট্রলার ঢুকতে পারে। ট্রলারের মাছ ওঠানামার কাজে শ্রমিকদের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে সাউথ সুন্দরবন ফিসারম্যান অ্যাসোসিয়েশন। তার সভাপতি মোজাম্মেল খাঁয়ের অভিযোগ, এই ঘাটটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে নামখানা পঞ্চায়েত সমিতি। সেই মতো তাঁরা ট্রলার পিছু ৪০-৫০ টাকা কর আদায় করে। কিন্তু শ্রমিকদের নিরাপত্তা বা ঘাটের পরিকাঠামো কোন উন্নয়ন করছে না।
অথচ এই ঘাটের পরিকাঠামোর সমস্যা নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি থেকে সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাকেও একাধিক বার জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমন্ত মালি বলেন, “ওই ঘাটটি সংস্কারের জন্য আমাদের তহবিল থেকে ৬ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ওই টাকা দিয়ে কাজ এখন শুরু করলে ১৫-২০ দিন সময় লেগে যাবে। এই ভরা মরসুমে ট্রলার লাগাতে পারবে না। তাই সিজন কেটে গেলে সংস্কারের কাজ হবে।”