খাল দখলমুক্ত করলেন গ্রামবাসীরা

সরকারি খাল ঘিরে ফেলে মাছ চাষ করার অভিযোগ ছিল তৃণমূলের এক নেতার বিরুদ্ধে। প্রশাসনের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। শেষমেশ সেই খাল দখলমুক্ত করলেন গ্রামবাসীদের একাংশই। যদিও দলেরই একাংশের তাতে মদত ছিল বলেও জানাচ্ছে তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২০
Share:

গ্রামের লোক চলেছেন খালের দিকে।

সরকারি খাল ঘিরে ফেলে মাছ চাষ করার অভিযোগ ছিল তৃণমূলের এক নেতার বিরুদ্ধে। প্রশাসনের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। শেষমেশ সেই খাল দখলমুক্ত করলেন গ্রামবাসীদের একাংশই। যদিও দলেরই একাংশের তাতে মদত ছিল বলেও জানাচ্ছে তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী। ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, “গ্রামবাসীরা যে অভিযোগ করছেন, তা ঠিক নয়। প্রশাসনের তরফে উদ্যোগ করা হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, পুজোর আগেই সমস্যা মেটানো হবে। কিন্তু ওঁরা আমাদের উপরে ভরসা না রেখে নিজেরাই এমন কাণ্ড ঘটালেন।”

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, খালটি প্রায় প্রায় দু’কিলোমিটার লম্বা। সেখান থেকে জল নিতেন উত্তর ও দক্ষিণ হাটপুকুরিয়ার বহু মানুষ। সেই জলেই চাষবাস করেন তাঁরা। খালে মাছ ধরেও অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নিকাশির জল ওই খাল দিয়ে গিয়ে পিয়ালি নদীতে মেশে।

অভিযোগ, কিছু দিন আগে তৃণমূলের হাটপুকুরিয়া অঞ্চল সভাপতি সিরাজ ঘরামি ও তাঁর অনুগামীরা কাঠের পাটা ও নাইলনের জাল ফেলে মাছ চাষ শুরু করেন। যার জেরে গ্রামবাসীদের আর ওই খাল ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছিল না। নিকাশিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা পরেশরাম দাস-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ গ্রামের মানুষের।

Advertisement

বৃহস্পতিবার গ্রামের প্রায় হাজার দু’য়েক মানুষ খালে নেমে পড়েন। কাঠের পাটা, জাল তুলে ফেলা হয়। মাটি ফেলে বন্ধ করে দেওয়া নিকাশি নালার অংশ ফের কেটে দেন গ্রামবাসীরা। জাল নিয়ে অনেকে মাছ ধরতেও নেমে পড়েন। বুধবার সন্ধে থেকেই গ্রামে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে এ নিয়ে প্রচার করেছিলেন কয়েক জন বাসিন্দা। সেই মতোই দেখা যায়, সকাল হতেই অনেকে জাল কাঁধে জড়ো হয়েছেন।

জলে নেমে মাছ ধরা শুরু করে দিলেন তাঁদের অনেকেই।

তৃণমূলের একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, দলেরই একাংশের মদত আছে গ্রামবাসীদের এই ভূমিকায়। সিরাজ ঘরামির সঙ্গে ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ছুন্নত হালদার ও দলের স্থানীয় নেতা সেলিম সর্দার নামে আরও এক তৃণমূল নেতার এক সময়ে সুসম্পর্ক ছিল। শুরুর দিকে খালের দখল নেওয়ার পিছনে সকলেরই মদত ছিল। কিন্তু পরে সিরাজের সঙ্গে বাকিদের বনিবনা না হওয়ায় তাঁরাই গ্রামবাসীদের একাংশকে খাল দখলমুক্ত করায় উসকানি দিয়েছেন।

যদিও গ্রামের সাধারণ বাসিন্দারা যে খাল দখল করায় অসন্তুষ্ট ছিলেন তা-ও বাস্তব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন বলেন, “প্রশাসন প্রায় দু’মাস সময় নিয়েও খাল দখলমুক্ত করেনি। বাধ্য হয়ে গ্রামের মানুষ নিজেরাই সেই দায়িত্ব নিয়েছেন।”

খাল দখলের অভিযোগই স্বীকার করেননি সিরাজ। তাঁর বক্তব্য, “আমি কখনও দখল নিইনি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কিছু যুবক ওই খালে মাছ ধরছিলেন। আমাদের দলেরই কিছু লোক বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে খাল দখল করল। এ ভাবে ওরা কিছু গরিব মানুষের পেটে লাথি মারল।” তাঁর অভিযোগ, বিষয়টি আলোচনায় মেটানোর জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রশাসন সেই ভূমিকা পালনে ব্যর্থ।

সেলিম সর্দার ও ছুন্নত হালদাররা আবার বলেন, “আমরা কখনওই ওই খাল দখলমুক্ত করতে যাইনি। গ্রামের মানুষের সমস্যা হওয়ায় তাঁরা নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পরেশরাম দাসের কথায়, “গ্রামের মানুষের অনুরোধ মতোই খাল দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা আমাদের উপরে ভরসা রাখতে পারলেন না।”

ছবি: সামসুল হুদা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন