ধর্ষণে অভিযুক্তের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল গ্রামবাসী

এক কিশোরীকে গত দেড় মাসে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে গাইঘাটার শিমুলপুরের চৌরঙ্গি এলাকার এক প্রৌঢ়ের বাড়িতে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালালেন এলাকার কয়েকশো মহিলা। শুক্রবার রাতের ঘটনা। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তের নামবিজন হাওলাদার। বছর ষাটেকের ওই ব্যক্তি অবশ্য সপরিবার এলাকা ছেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share:

অভিযুক্ত বিজন হাওলাদার (ইনসেটে)-এর।

এক কিশোরীকে গত দেড় মাসে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে গাইঘাটার শিমুলপুরের চৌরঙ্গি এলাকার এক প্রৌঢ়ের বাড়িতে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালালেন এলাকার কয়েকশো মহিলা। শুক্রবার রাতের ঘটনা। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তের নামবিজন হাওলাদার। বছর ষাটেকের ওই ব্যক্তি অবশ্য সপরিবার এলাকা ছেড়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করা হয়েছে। তার খোঁজে জোর তল্লাশি চালানো হচ্ছে।”

Advertisement

পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাবা মারা গিয়েছেন। মা মনোহারি জিনিস ফেরি করে সংসার চালান। প্রতিবেশী বিজনের তিন ছেলের দু’জন বাইরে থাকেন। স্ত্রী অঞ্জলি ফুলের কাজ করায় সবসময় বাড়িতে থাকেন না। যে ছেলে গ্রামে থাকেন, তিনিও কাজের খাতিরে বেশির ভাগ সময় বাড়িতে থাকেন না। বিজনের পুত্রবধূও বাড়িতে থাকেন না। ফাঁকা বাড়িতে বিজন ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ।

ঘটনার সূত্রপাত মাস দেড়েক আগে। কিশোরীর কথায়, “আমাদের ঘড়িটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে দাদুর (বিজনকে দাদু বলেই ডাকে সে) কাছে সময় জানতে যাই। দাদু একাই ছিল। তখনই ঘরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার চালায়। হুমকি দিয়ে বলে, কাউকে জানালে আমাকে আর মাকে মারধর করবে।” অভিযোগ, সপ্তাহ দুয়েক পরে ফের এক সকালে কিশোরীর মা বেরিয়ে গেলে বিজন একই ভাবে ধর্ষণ করে তাকে। মুখ না খোলার মূল্য হিসেবে ফল ও পাঁচ টাকাও দিতে চায়। গত ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় কিশোরীর মা বাজারে গেলে ফের বিজন কিশোরীকে হুমকি দিয়ে নিজের বাড়িতে এনে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।

Advertisement

কিশোরীর মা শনিবার দুপুরে বলেন, “মেয়ের প্রতি বিজনের ব্যবহারে পরিবর্তন দেখে সন্দেহ হয়। বুধবার জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে কিছু বলতে চায়নি। পরে মেয়ের জামা দেখে বুঝি কিছু একটা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের ভয় দেখালে ও সব খুলে বলে।” ততক্ষণে অবশ্য বিজন সপরিবার পালিয়েছে।” বৃহস্পতিবার গাইঘাটা থানায় বিজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ জানান কিশোরীর মা। শুক্রবার বনগাঁ হাসপাতালে কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। বনগাঁ আদালতে গোপন জবানবন্দিও দেয় কিশোরী।

শনিবার দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, টিনের ছাউনি ও বেড়ার একটি ঘর। মা-মেয়ের ঘরের সামনে প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে এই হতদরিদ্র পরিবারকে ভরসা জোগাচ্ছেন। আর বিজনের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কিশোরী বলে, “মাকে মারার ভয় দেখিয়েছিল। মা ছাড়া তো আমার কেউ নেই।” তার মা বলেন, “বিজনকে দাদু বলে ডাকত। আমাদের বাড়িতেও ও আসত। বুঝতে পারিনি আমাদের এত বড় সর্বনাশ করবে।” গ্রামের মহিলারা জানালেন, বছর কুড়ি আগে বিজন পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করেছিল। তখন তাকে গণপিটুনি দিয়ে আর্থিক জরিমানা দাবি করা হয়েছিল। সকলের সামনে ক্ষমা চাওয়ায় গ্রামের মানুষ তাকে ক্ষমা করে দেয়। কয়েক বছর আগেও ওই প্রৌঢ় বছর দশেকের এক নাবালিকাকে খেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করতে চায় বলে অভিযোগ। বাধা দিলে অস্ত্রের কোপ মারে। পরে সে গা-ঢাকা দেয়। ফের এমন ঘটনা ঘটায় স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিজনকে আর এলাকায় ঢুকতে দেবেন না। স্থানীয় যুবক সব্যসাচী কীর্তনিয়ার কথায়, “প্রথমবার বিজনকে ক্ষমা করাটাই আমাদের অন্যায় হয়েছিল। এ বার আমরা ওর ফাঁসি বা যাবজ্জীবনের জন্য লড়ব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন