নলকূপে লালচে দুর্গন্ধযুক্ত জল, নজর নেই প্রশাসনের

বোতলে করে লালচে রঙের তরল ভরে নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের মানুষেরা। দেখে মনে হচ্ছে ঠিক যেন পেট্রোল। পরে জানা গেল ওই বোতল বা জ্যারিকান করে যা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা আসলে জল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ ব্লকের কঙ্কনদিঘির পশ্চিমজটা গ্রামের কাঁসারি পাড়ায় উৎস নলকূপের জলের এমনই অবস্থা। স্থানীয় বিধায়িকা দেবশ্রী রায়ের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় ২০১২ সালে ওই নলকূপ বসিয়েছিল জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়দিঘি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৯
Share:

বোতলে করে লালচে রঙের তরল ভরে নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের মানুষেরা। দেখে মনে হচ্ছে ঠিক যেন পেট্রোল। পরে জানা গেল ওই বোতল বা জ্যারিকান করে যা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা আসলে জল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ ব্লকের কঙ্কনদিঘির পশ্চিমজটা গ্রামের কাঁসারি পাড়ায় উৎস নলকূপের জলের এমনই অবস্থা।

Advertisement

স্থানীয় বিধায়িকা দেবশ্রী রায়ের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় ২০১২ সালে ওই নলকূপ বসিয়েছিল জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। মাটি থেকে দশ ফুট উঁচুতে সিঁড়ি বেয়ে উঠে জল নিতে হয়। স্থানীয়দের কাছে এই নলকূপটি আয়লা নলকূপ নামে পরিচিত। নোনা ও কষা স্বাদের জলই পান করতে বাধ্য মানুষজন। অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে বারবার আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই গত দু’বছর ধরে জল নিয়ে যন্ত্রনায় ভুগছেন এই এলাকার প্রায় একশো পরিবার।

স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মণি নদীর তীরবর্তী এই এলাকাগুলিতে পানীয় জলের সঙ্কট বরাবরই রয়েছে। কারণ মাটির কয়েকশো ফুট গভীরে রয়েছে পানযোগ্য জল। এলাকার অধিকাংশ মানুষের আর্থিক সংগতি কম থাকায় সরকারি উদ্যোগেই গভীর নলকূপ বসিয়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সনৎ হালদার বলেন, “নলকূপটি বসানোর সময় থেকেই এই সমস্যা। কিন্তু প্রথম থেকেই তা সমাধানের বিষয়ে উদাসীন থেকেছে প্রশাসন। বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায় আমরা বাধ্য হচ্ছি ওই জল পান করতে।” গ্রামবাসী সুজাতা পাত্রের কথায়, “বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের একটি নলকূপে পানযোগ্য জল পাওয়া যায়। কিন্তু তা নিয়মিত আনা সম্ভব নয়। সব জেনে বুঝেও নোনা ও কষা জল পান করতে একরকম বাধ্য করছে পঞ্চায়েত ও প্রশাসন।” জল নেওয়ার ফাঁকে আর এক গ্রামবাসী রিক্তা হালদার বলেন, “গরমকালে এই জল পানই করা যায় না। তখন জলের রং আরও লাল হয়ে যায়। তা ছাড়া জলে দুর্গন্ধও হয়। শীতকালেও প্রায় একই অবস্থা। যার ফলে আমাদের প্রায়ই পেটের অসুখে ভুগতে হচ্ছে।”

Advertisement

ওই জলেই রান্না হয় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। কারণ এত পরিমাণ রান্নার ও পানীয় জল প্রতিদিন বয়ে আনা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের প্রণয় দে বলেন, “নলকূপ বসানোর সময় জলস্তরের হিসাবে ভুল করার কারণেই এই বিপত্তি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহলকেই একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু এর জন্য পৃথকভাবে কোনও তরফেই অর্থ বরাদ্দ না হওয়ার সমস্যা থেকে গিয়েছে। সম্প্রতি জেলা পরিষদের তরফে ওই নলকূপের জলের নমুনা নিয়ে যাওয়া হয়েছে পরীক্ষার জন্য।”

গ্রামবাসীদের প্রশ্ন তাহলে এত টাকা ব্যয়ের যৌক্তিকতা কোথায়?

তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি কংসারীমোহন বর বলেন, “নলকূপটি তুলনামূলকভাবে অনেক কম গভীরের। এলাকার কয়েকটি নলকূপে এমন জল ওঠে ঠিকই। তবে তা পানযোগ্য ও উপকারী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন