পুরভোট ২০১৫

বারাসতে বাতিল ফব-র চার প্রার্থীর মনোনয়ন

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তো ছিলই, তার উপরে দেরি করে মনোনয়ন দেওয়ায় বাতিল হল বারাসত পুরসভার ফরওয়ার্ড ব্লকের চার প্রার্থীর আবেদন। ওই চার জনের মধ্যে আবার রয়েছেন গতবারের জয়ী কাউন্সিলরও। অর্থাত্‌ ওই চারটি ওয়ার্ডে বামেদের আর প্রার্থীই থাকলেন না। এ দিকে, মধ্যমগ্রামে জোড়া খুনে অভিযুক্ত, পলাতক এক ব্যক্তিকে প্রার্থী করা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০২:৪২
Share:

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তো ছিলই, তার উপরে দেরি করে মনোনয়ন দেওয়ায় বাতিল হল বারাসত পুরসভার ফরওয়ার্ড ব্লকের চার প্রার্থীর আবেদন। ওই চার জনের মধ্যে আবার রয়েছেন গতবারের জয়ী কাউন্সিলরও। অর্থাত্‌ ওই চারটি ওয়ার্ডে বামেদের আর প্রার্থীই থাকলেন না। এ দিকে, মধ্যমগ্রামে জোড়া খুনে অভিযুক্ত, পলাতক এক ব্যক্তিকে প্রার্থী করা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

Advertisement

বুধবার দুপুর ৩টে ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ সময়। কিন্তু ফরওয়ার্ড ব্লক বারাসত পুরসভায় ১, ১৪, ২৫, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে অ্যনেক্সার-২ (দলের পক্ষ থেকে প্রতীক দেওয়ার শংসাপত্র) জমা দেয় সে দিন সন্ধ্যা নাগাদ। ফলে সময় পেরিয়ে যাওয়ায় নির্বাচন কমিশন বাতিল করে দেয় মনোনয়ন। এর পরে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে উত্তর ২৪ পরগনা বাম নেতৃত্ব। তারা কমিশনের কাছে আবেদন জানায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকে না হলেও ওই চার জনকে অন্তত নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ার সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু নির্দল প্রার্থীর মনোনয়নের জন্য ১০ জন সাক্ষীর স্বাক্ষর লাগে, যেখানে প্রতীকে লড়তে গেলে লাগে দু’জনের। ফলে সেই আবেদনও বাতিল হয়ে যায়।

কিন্তু এমন হল কেন? ফরওয়ার্ড ব্লকের অন্দরের খবর, এমনিতেই বারাসত-সহ উত্তর ২৪ পরগনায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার ফরওয়ার্ড ব্লক। বারাসত পুরসভায় তাদের ১১টি আসন ছাড়ে বামফ্রন্ট। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হরিপদ বিশ্বাস, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, মোর্তজা হোসেন গোষ্ঠীর হাতে থাকে ৭টি এবং সরল দেব গোষ্ঠীকে দেওয়া হয় ৪টি আসন। মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ওই চারটি আসনেই। এ বিষয়ে সঞ্জীববাবু এ দিন সরলবাবুর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, “আমরা ৭টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছি। তৃণমূলের কাছ থেকে টাকা খেয়ে সরলবাবু ৪টি ওয়ার্ডে মনোনয়ন বাতিল করিয়েছেন।” এ বিষয়ে সরলবাবু বলেন, “কে কী মন্তব্য করছেন, তা নিয়ে কিছু বলব না। দলের রাজ্য কমিটি তদন্ত করে দোষীদের ব্যবস্থা নিক। তবে ভোটে লড়তে চেয়ে ওই চার প্রার্থীকে নিয়ে হাইকোর্টে যাব।”

Advertisement

বারাসত পুরভোটে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলেও। মনোনয়ন না পেয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জনা বিশ্বাস বিজেপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন। ২৭ নম্বরে মনোনয়ন না পেয়ে ভোটেই দাঁড়াননি তৃণমূল কাউন্সিলর মন্টু মণ্ডল। আবার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল নেতা অশোক মুুন্সীর স্ত্রী রিনা মুন্সী বিজেপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন। টিকিট না পেয়ে নির্দলে লড়ছেন প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর অতনু ঘোষও।

এ দিকে, মধ্যমগ্রাম পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে বিনোদ সিংহ ওরফে রিঙ্কুকে। তাঁর বিরুদ্ধে জোড়া খুনের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে বাম-বিজেপি। পুলিশ জানিয়েছে, ২০১২ সালের ২৬ জুন সন্ধ্যায় দোহারিয়ার শৈলেশনগরে রাম দাস নামে এক দুষ্কৃতীকে গুলি করে খুন করা হয়। সোমনাথ মুখোপাধ্যায় নামে বেসরকারি সংস্থার এক কর্মী ঘটনাটি দেখে ফেলায় সাক্ষ্য লোপাট করতে তাঁকেও গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনায় ১০ অক্টোবর মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করে ১০ জনের বিরুদ্ধে বারাসত আদালতে চার্জশিট দেয় মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ। সেই চার্জশিটে আবার ৪ জনকে পলাতক বলে জানায় পুলিশ। তাদেরই একজন তৃণমূল প্রার্থী বিনোদ সিংহ।

এ দিনও অবশ্য অধরাই রয়ে যান বিনোদবাবু। ফোন করা হলে এক ব্যক্তি নিজেকে বিনোদবাবুর ভাই পরিচয় দিয়ে বলেন, “দাদাকে পাওয়া যাবে না। দাদা বেড়াতে গিয়েছিল বলে হাজিরা দিতে পারেনি, তাই ওকে মামলায় পলাতক দেখানো হয়েছে।”

মধ্যমগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন চেয়ারম্যান রথীন ঘোষ বলেন, “অভিযোগ হওয়া মানেই কেউ দোষী নয়। আইন আইনের পথে চলবে। দল মনে করেছে বলে প্রার্থী করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন