পড়াশোনা, চাকরি, প্রেম করে বিয়ে। কিছুই বাঁচাতে পারল না বছর চব্বিশের তরুণী শ্রেষ্ঠা চন্দকে। পণের দাবি না মেটানোয় বিয়ের দু’বছরের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মরতে হল তাঁকে। শুক্রবার তাঁর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠার স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি অশোকনগরের কল্যাণগড় এলাকার। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর দু’য়েক আগে হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা শ্রেষ্ঠার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল কল্যাণগড়ের রাজা চন্দ-র। দু’জনেই সেক্টর ফাইভের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। সেখান থেকেই পরিচয় এবং প্রণয়। দু’জনে গোপনে বিয়েও করেন। পরে অবশ্য শ্রেষ্ঠার পরিবারের তরফে সামাজিক অনুষ্ঠান করা হয়। ওই তরুণীর বাবা চন্দন ঘোষের দাবি, ছেলের আত্মীয়দের কথা মতোই বিয়েতে নগদ টাকা, গয়না, আসবাবপত্র দিতে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পরেও টাকার দাবি আসতে থাকে। বেশ কয়েক বার টাকা দিতেও হয়েছে। এমনকী, মেয়ের বেতনের পুরো টাকাও নিয়ে নিত জামাই।
চন্দনবাবু জানান, কিছু দিন ধরে গাড়ি দিতে হবে বলে দাবি করছিল রাজা ও তার পরিবারের লোকজন। এ বার বেঁকে বসে মেয়ে। তা-ই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মন কষাকষি চলছিল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার, ঘটনার দিন শরীর খারাপ বলে অফিস যাননি রাজা। শ্রেষ্ঠাকে বেলা দেড়টা নাগাদ ফোন করেন তিনি। বলেন, শরীর খুবই অসুস্থ। শ্রেষ্ঠা যেন দ্রুত বাড়ি ফিরে আসে। সল্টলেকের অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি ভাড়া করে পড়িমড়ি বাড়ি ফেরেন ওই তরুণী।
তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল অন্য বিপর্যয়। দুপুরের দিকে প্রতিবেশীরা শুনতে পান, শ্রেষ্ঠা শৌচাগারের ভিতর থেকে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে আর্তনাদ করছেন। শৌচাগারের দরজা খোলা। জ্বলন্ত অবস্থায় সেখানে ছটফট করছেন ওই তরুণী। কিন্তু বাড়ির কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন না। প্রতিবেশীরাই শ্রেষ্ঠাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। ততক্ষণে অবশ্য পালিয়েছেন রাজা ও তাঁর মা মীরা। পরে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান ওই তরুণী। খুনের অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। পরে ওই এলাকা থেকেই গ্রেফতার করা হয় রাজা, তাঁর মা মীরা ও বাবা গোকুলবিহারীকে।
চন্দনবাবু বলেন, “বুধবার বিকেল ৫টা নাগাদ রাজা ফোন করে আমাকে জানায়, মেয়ে অসুস্থ। আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি। সেখানে গিয়ে দেখি, ততক্ষণে দেহে প্রাণ নেই।
গাড়ি দিইনি বলেই মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারল ওরা।”