বনগাঁয় ফের একই দিনে দু’টি বাড়িতে ভয়াবহ ডাকাতি, প্রশ্নের মুখে পুলিশ

খবর পেয়ে গাড়ি নিয়ে এসেছিল পুলিশ। গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। গাড়ি ঘুরিয়ে তখনকার মতো চলে যান পুলিশ কর্মীরা। পরে যখন বিশাল বাহিনী নিয়ে পুলিশ এল ঘটনাস্থলে, তত ক্ষণে বাড়ির লোকজনকে মারধর করে বহু টাকার জিনিসপত্র নিয়ে পগারপার ডাকাত দল। রবিবার রাতে গোপালনগরের এই ঘটনায় প্রথম বার পুলিশের গাড়িতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের পাঠানো হয়েছিল বলেও অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। সব মিলিয়ে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ গোপালনগরের মানুষ। একই রাতে বাগদাতেও একটি বাড়িতে ডাকাতি হওয়ায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০০
Share:

জখম দেবাশিস। নিজস্ব চিত্র।

খবর পেয়ে গাড়ি নিয়ে এসেছিল পুলিশ। গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। গাড়ি ঘুরিয়ে তখনকার মতো চলে যান পুলিশ কর্মীরা। পরে যখন বিশাল বাহিনী নিয়ে পুলিশ এল ঘটনাস্থলে, তত ক্ষণে বাড়ির লোকজনকে মারধর করে বহু টাকার জিনিসপত্র নিয়ে পগারপার ডাকাত দল।

Advertisement

রবিবার রাতে গোপালনগরের এই ঘটনায় প্রথম বার পুলিশের গাড়িতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের পাঠানো হয়েছিল বলেও অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। সব মিলিয়ে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ গোপালনগরের মানুষ। একই রাতে বাগদাতেও একটি বাড়িতে ডাকাতি হওয়ায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “দু’টি আলাদা আলাদা দল ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।” ডাকাতির খবর পেয়ে সিভিক ভলান্টিয়ার পাঠানোর অভিযোগ অবশ্য মানেননি তিনি। পুলিশের দাবি, বোমা পড়ায় গাড়ি নিয়ে কিছুটা পিছু হঠেছিলেন কর্তব্যরত অফিসার। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই তারা ওই বাড়ির দিকে যায়। তত ক্ষণে আরও বড় বাহিনী নিয়ে চলে এসেছে পুলিশ।

গোপালনগর থানা এলাকায় পাল্লার চারাবাগানের বাসিন্দা দিলীপ দাসের বাড়িতে রবিবার রাতে বারান্দার গ্রিলের দু’টি তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। দিলীপবাবুর ছেলে দেবাশিসবাবুর ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকেই পাঁচ জন দুষ্কৃতী বন্দুক ও ভোজালি ধরে দেবাশিস ও তাঁর স্ত্রীর গলায়। দেবাশিসের কথায়, “দুষ্কৃতীরা বার বার বলছিল, তুই যে ক্যাশ টাকা নিয়ে এসেছিস তা আমাদের দিয়ে দে। এই এলাকার লোকই আমাদের খবর দিয়েছে।” দেবাশিসকে দফায় দফায় মারধর করা হয়। প্রতিবাদ করলে ভোজালি দিয়ে দেবাশিসের বাঁ হাতে কোপ মারে ডাকাতেরা।

Advertisement

দেবাশিস ভিনদেশে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ১৯ জানুয়ারি বাড়ি এসেছেন। পরিবারের লোকজনের অনুমান, সেই খবর দুষ্কৃতীদের কাছে ছিল। তাঁর স্ত্রী পিয়ারীদেবী বলেন, “আমার বাচ্চারা ভয়ে কাঁদছিল। ওরা হুমকি দিয়ে বলে, কান্না না থামলে ওদের গলার নলি কেটে দেবে। আলমারির চাবি দিতে দেরি হওয়ায় দুষ্কৃতীরা আমার বুকে শাবল দিয়ে মারে।” পাশের ঘর থেকে দিলীপবাবুর স্ত্রী জ্যোত্‌স্নাদেবী বেড়িয়ে এলে তাঁর হাতে গলায় থাকা গয়না দুষ্কৃতীরা কেড়ে নেয়। হাতের সোনার বালা খুলতে দেরি হওয়ায় এক দুষ্কৃতী তাঁর হাতে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপ মারে। এমনকী, অসুস্থ দিলীপবাবুকেও ওই ডাকাত দল মারধর করে বলে অভিযোগ। দেবাশিসের দাদার মেয়ের গলায় ভোজালি ধরেছিল দুষ্কৃতীরা। মেয়ের মা দিশাদেবী তাঁর গয়না তুলে দেন দুষ্কৃতীদের হাতে।

কিন্তু সুযোগ বুঝে তিনিই গাইঘাটায় তাঁর এক আত্মীয়কে ফোন করে ঘটনা জানিয়ে দেন। সেই আত্মীয় গাইঘাটা থানায় ফোন করেন। গাইঘাটা থানার পুলিশ গোপালনগর থানায় বিষয়টি জানায়। ডাকাতি চলাকালীন পুলিশ গাড়িতে হুটার বাজিয়ে দেবাশিসবাবুর বাড়ির সামনে আসে। সে সময় বাইরে থাকা দুষ্কৃতীরা পুলিশের গাড়িতে বোমা মারলে গাড়ি ফিরে যায় বলে অভিযোগ। ডাকাত দলটি ছয় চাকার ট্রাকে করে পালায়। কয়েক লক্ষ টাকার গয়না ও নগদ কিছু টাকা লুঠ হয়েছে বলে অভিযোগ।

একই রাতে অন্য ঘটনাটি ঘটে বাগদা থানার সাড়াহাটী এলকায় হেলেঞ্চা-দত্তফুলিয়া সড়কের পাশে বৃদ্ধা প্রভাতী মণ্ডলের বাড়িতে। তাঁর একমাত্র ছেলে সুজিত দুবাইতে সেন্টারিংয়ের কাজ করেন। ঘটনার দিন বাড়িতে ছিলেন প্রভাতীদেবী ও তাঁর তিন মেয়ে। নগদ কয়েক হাজার টাকা ও কয়েক ভরি সোনার গয়না দুষ্কৃতীরা নিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ প্রভাতীদেবীর। গভীর রাতে চার জনের সশস্ত্র একটি ডাকাত দল বাড়ির গ্রিলের তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে। সকলের মুখই হনুমান টুপি দিয়ে ঢাকা ছিল। বাড়ির সকলকে তুলে একটি ঘরে নিয়ে আসে তারা। প্রথমে দু’টি শো-কেস ভেঙে সোনাদানা লুঠ করে। বাড়ির সদস্যদের গায়ের গয়নাও খুলে নেয় তারা। খাটের তলায় রাখা ট্রাঙ্ক থেকে টাকা এবং বাসনপত্র লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। দু’টি মোবাইলও নিয়ে যায়। রাত আড়াইটে নাগাদ তারা সেখান থেকে চলে যায়। প্রভাতীদেবী বলেন, “যাওয়ার আগে দুষ্কৃতীরা হুমকি দিয়ে গিয়েছে, পুলিশকে জানালে তারা ফের এসে বোমা মেরে আমার বাড়ি উড়িয়ে দেবে। খুবই ভয়ে আছি আমরা।”

বনগাঁ মহকুমায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে গত বছরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা গিয়েছিল। সম্প্রতি বনগাঁর এসডিপিও, ওসি গাইঘাটা এবং ওসি বাগদা বদলি হয়েছেন অন্যত্র। নতুন এসডিপিও হয়ে ক্যানিং থেকে এসেছেন পুলিশ অফিসার বিশ্বজিত্‌ মাহাত। সাধারণ মানুষের আশা ছিল, এ বার হয় তো মহকুমার আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটবে। বছর শুরুর কয়েকটা দিন সব কিছুই ভাল ভাবে চলছিল। কিন্তু তাল কাটলো একই দিনে দু’টি ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনায়। মানুষের মনে ফের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাগদার সাধারণ মানুষের দাবি, চলতি বছরে এই মহকুমায় সব থেকে বেশি দুষ্কৃতী-তাণ্ডব চলছে। বাগদা থানা এলাকায় ইতিমধ্যেই বাগদা বাজার এলাকা থেকে একটি খালি ট্রাক চুরি হয়েছে। আমডোব এলাকায় সোনার দোকানে চুরি হয়েছে। চুরির ঘটনা ঘটেছে বৈকোলা, হেলেঞ্চা এলাকাতেও। কুলিয়া বাঁশঘাটা, গাঙ্গুলিয়া, বয়রা, কাশীপুর বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে রমরমিয়ে চলছে কাফ সিরাফ, সার ও ধুর পাচার। একই সঙ্গে বেড়েছে চোলাই সাট্টা ও জুয়ার থেক। পুলিশের চোখের সামনে সব কিছু ঘটলেও এ বিষয়ে তারা উদাসীন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।

এলাকাবাসীর প্রশ্ন, “তা হলে কী পুলিশের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের গোপন কোনও আঁতাত রয়েছে?” হারান দাস, নরোত্তম রায় নামে পাল্লা এলাকার বাসিন্দারা বলেন, “প্রশাসনের উদাসীনতার জন্যই ডাকাতি ঠেকানো গেল না। আমরা এলাকার মানুষ এখন আতঙ্কিত।” খবর পেয়েও থানা থেকে পুলিশ অফিসার না পাঠিয়ে সিভিক ভলেন্টিয়ার্স পাঠানো হয়েছিল বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। কিছু দিন আগে পাল্লা বাজারে পর পর পাঁচটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। তার কিনারা আজও পুলিশ করতে পারেনি বলে অভিযোগ। গত বছর মহকুমা জুড়েই লেগে ছিল খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, বোমাবাজি, চুরি, গুলি চালার মতো ঘটনা। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন