স্ত্রীকে রথের মেলা দেখানোর নাম করে খুনের অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে। সোমবার সকালে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের পিছনে একটি পরিত্যক্ত ঘরের বারান্দায় সঙ্গীতা পাসোয়ান গুপ্ত (২৭) নামে ওই বধূর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন হাসপাতালেরই কয়েকজন কর্মী। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়। বিকেলে গ্রেফতার হন সঙ্গীতার স্বামী প্রকাশ গুপ্ত।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দারিদ্র্য, হতাশা ও সন্দেহের কারণেই এই খুন। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান সি সুধাকর বলেন, ‘‘প্রকাশ হতাশার কারণে স্ত্রীকে খুন করেছেন বলে প্রাথমিক ভাবে আমাদের অনুমান, তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’
তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, দুপুর পর্যন্ত তরুণীর পরিচয় জানা না গেলেও তাঁর ছবি নিয়ে এলাকায় খোঁজাখুঁজি শুরু করা হয়। সঙ্গীতার ছবি চিনতে পারেন জগদ্দলের সার্কাস মাঠ এলাকার বি এল ১০ নম্বর গলির বাসিন্দাদের কয়েকজন। বছর পাঁচেক আগে এই এলাকারই প্রকাশের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সঙ্গীতার। বেশ কিছু দিন প্রেমের পরে বিয়ে। এক বছর পরেই সন্তান হয়।
কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে বনিবনা না হওয়ায় ভাটপাড়ায় বাপের বাড়িতে চলে যান সঙ্গীতা। প্রকাশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও শ্বশুরবাড়িতে ফিরতে নারাজ ছিলেন ওই তরুণী। স্বামীকে নিয়ে আলাদা সংসার পাততে চেয়েছিলেন। প্রকাশকে এ জন্য চাপ দিতেন তিনি। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ধরা পড়ার পরে জেরায় এমনটাই দাবি করেছেন ওই যুবক। পুলিশের দাবি, জেরায় ওই যুবক আরও জানিয়েছেন, জগদ্দলের একটি ভোজ্যতেল কারখানার শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। মাসিক আয় মাত্র ৩ হাজার টাকা। আলাদা থাকার খরচ বেজায়। এত অল্প আয়ে আলাদা থাকা সম্ভব নয় বলে স্ত্রীকে সে কথা বলেওছিলেন। কিন্তু সেই যুক্তি সঙ্গীতা মানতে চাননি। পরিবর্তে বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন।
তদন্তকারীরা জানান, স্ত্রীকে নিয়ে অশান্তির কারণেই বিধ্বস্ত প্রকাশ খুনের পরিকল্পনা করেন। খুনের পরে বাড়িও ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ধরা পড়ার পরে নিজেই কৃতকর্মের কথা কবুল করেন।
এক পুলিশ কর্তা জানান, ধরা পড়ার সময়েও প্রকাশের মানিব্যাগে স্ত্রীর ছবি ছিল। কিন্তু সাংসারিক জীবন সুখের ছিল না। তার উপরে স্ত্রী অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখছেন কিনা, সেই সন্দেহও তাড়া করে বেড়াত ওই যুবককে।
সব কিছু নিয়ে ফয়সালার জন্য রবিবার সন্ধ্যায় স্ত্রীকে ডেকেছিলেন রথের মেলায় নিয়ে যাবেন বলে। গোলঘরের কাছে হাসপাতালের মধ্যে দিয়ে শর্টকাট রাস্তায় যাওয়ার নাম করে ভাটপাড়া হাসপাতাল চত্বরে ঢোকেন দু’জন। সঙ্গীতা প্রথমে রাজি না হওয়ায় প্রকাশ তাঁকে ডাক্তার দেখানোর কথাও বলেন বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। পুলিশের অনুমান, হাসপাতালের পিছনে পরিত্যক্ত ঘরের কাছে নিয়ে গিয়ে ওই যুবক নাক, মুখ চেপে ধরে খুন করেন স্ত্রীকে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা জানান, সম্ভবত হতাশা থেকেই এই রকম চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভেবেছেন প্রকাশ। কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে। সরকারি হাসপাতালের ফটক থাকলেও সেখানে নিরাপত্তার বালাই নেই। যে ঘরে ওই তরুণীর দেহ পাওয়া গিয়েছে, এক সময় সেখানে যক্ষ্মার চিকিৎসা হত। বহু বছর ওই ঘর পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ঘরটি ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা হলেও সরকারি নিয়ম-কানুনের ফাঁসে তা আর হয়নি।