সিসি টিভি বসিয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরার ব্যবস্থা করে সাজানো হয়েছে স্কুলচত্বর

১৯৫৭ সালে প্রত্যন্ত সুন্দরবন বাসন্তী ব্লকের নারায়ণতলা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দির উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। এক সময়ে প্রচুর সমস্যা থাকলেও ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে এখন স্কুলটিকে অত্যাধুনিক ভাবে গড়ে তুলছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্কুলটিকে সাজানো হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। অতি অত্যাধুনিক পদ্ধতি শুরু করা হয়েছে। যা এই সময়কার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি নয়া নজির বলা যেতে পারে।

Advertisement

সামসুল হুদা

বাসন্তী শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৫
Share:

ঝাঁ চকচকে স্কুলে ঢোকার মুখে লাগানো হয়েছে গাইড ম্যাপ। নিজস্ব চিত্র।

১৯৫৭ সালে প্রত্যন্ত সুন্দরবন বাসন্তী ব্লকের নারায়ণতলা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দির উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। এক সময়ে প্রচুর সমস্যা থাকলেও ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে এখন স্কুলটিকে অত্যাধুনিক ভাবে গড়ে তুলছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্কুলটিকে সাজানো হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। অতি অত্যাধুনিক পদ্ধতি শুরু করা হয়েছে। যা এই সময়কার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি নয়া নজির বলা যেতে পারে।

Advertisement

স্কুলের কোথায় কী রয়েছে, তা বোঝানোর জন্য স্কুল গেটের সামনেই ম্যাপ তৈরি করা রয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের পরিচয়পত্রের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন শিক্ষক-শিক্ষকাদেরও পরিচয়পত্র। যা ছাড়া, স্কুল চত্বরে প্রবেশই নিষেধ। স্কুলে অভিভাবক বা বহিরাগত কেউ প্রবেশ করলে ভিজিটার রেজিস্টারে সই করে ঢুকতে হবে। প্রধান শিক্ষকের অনুমতি ছাড়া স্কুলের ভিতরে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ। বিদ্যালয়ের ভবনগুলির নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন মণীষীদের নামে। বিদ্যালয়টি হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে একটি মহাবিদ্যালয়। শিক্ষকদের বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ডেন্সের মাধ্যমে হাজিরা দিতে হয়। পঠনপাঠন প্রক্রিয়া ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তা জানতে স্কুলে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। প্রধান শিক্ষক এই বিষয়ে নজর রাখবেন বলে তাঁর ঘরেই রয়েছে মনিটর। তা ছাড়া, শিক্ষক-শিক্ষিকারা নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাসরুমে প্রবেশ করছেন কিনা, সে বিষয়টি ছাত্রছাত্রীরা অ্যাকাডেমিক রিপোর্ট কার্ডে লিপিবদ্ধ করছে। নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাসে প্রবেশ না করলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় বলে জানালেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। মিড ডে মিলের খাদ্য তালিকা ছাত্রছাত্রীদের ডায়েরিতে লিখে দেওয়া হয়। অভিভাবকদের জন্য রয়েছে প্রতীক্ষালয়। বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন, পঠনপাঠন প্রক্রিয়া, মিড ডে মিল-সহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে ১৪টি উপসমিতি করা হয়েছে। যা দেখে মনে হবে কোনও সরকারি স্কুল নয়, বরং কর্পোরেট সংস্থা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে খুশি অভিভাবক-পড়ুয়ারাও।

কী ভাবে সম্ভব হল এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থা?

Advertisement

এই প্রশ্নের উত্তরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “স্কুলে বর্তমান পরিচালন সমিতি সভাপতি তথা এই স্কুলের একদা প্রাক্তন ছাত্র লোকমান মোল্লার আন্তরিক প্রচেষ্টায় স্কুলের পরিকাঠামো-সহ সমস্ত বিষয়টি সুষ্ঠ ভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।” লোকমান বলেন, “প্রধান শিক্ষক শিক্ষারত্নের ২৫ হাজার টাকা পুরষ্কার পেয়েছিলেন। সেই টাকা তিনি স্কুলকে দিয়ে দেন। তা ছাড়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মী-সহ স্কুলের পরিচালন সমিতি স্কুলকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলার জন্য টাকা দিয়েছেন। প্রত্যেকের প্রচেষ্টায় স্কুলকে নতুন ভাবে সাজানো সম্ভব হয়েছে।” আগামী দিনে রাজ্যে এটি একটি মডেল স্কুল হিসাবে পরিচিত হবে বলে মনে করেন লোকমান। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সর্ব শিক্ষা মিশনের ডিপিও সুজিত মাইতি বলেন, “জেলার মধ্যে এই প্রথম কোনও স্কুলে এই ধরনের আধুনিক পদ্ধতি চালু হয়েছে।”

জেলা স্কুলশিক্ষা পরিদর্শক দেবজ্যোতি বড়াল বলেন, “বিভিন্ন দিক বিচার করে জেলার ১০টি স্কুলকে আমরা ‘রোল মডেল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তার মধ্যে বাসন্তীর ওই স্কুল একটি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন