বিব্রত, তবু হাসিমুখে হেলমেটহীন মোটরবাইক সওয়ারি। নিজস্ব চিত্র।
স্ত্রীকে নিয়ে হেলমেট ছাড়া খোশ মেজাজেই যশোহর রোড ধরে দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন বছর চল্লিশের ভদ্রলোক। মঙ্গলবার সকাল এগারোটা নাগাদ আচমকাই অশোকনগর থানার বিল্ডিং মোড়ের কাছে ওই ব্যক্তির পথ আটকালো এক দল স্কুল-পড়ুয়া। তাদের অনুরোধে সড়কের পাশে বাইকটি দাঁড় করাতেই উপহার পেলেন একটি গোলাপ। অসুরক্ষিত বেআইনি ভাবে বাইক চালানোর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে এমনই অভিনব পন্থায় পথে নামল অশোকনগর স্কুলের পড়ুয়ারা।
স্থানীয় অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এ দিন সকাল এগারোটা থেকে বারোটা পর্যন্ত যশোহর রোডে বাইক চালকদের সচেতন করার এই উদ্যোগ নেয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছিলেন একটু দূরে। প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষ বললেন, ‘‘আমাদের এই উদ্যোগের ফলে যদি এক জনও বাইক চালক সচেতন হন, সেটাই আমাদের কাছে বড় পাওয়া।” তিনি আরও যোগ করেন, এর ফলে এই পড়ুয়ারা নিজেরা ভবিষ্যতে বাইক চালানোর সময় সতর্ক হবে। তা ছাড়া তারা বাড়িতে গিয়ে নিজেদের আত্মীয় পরিজন, যাঁরা বাইক চালান তাঁদেরও সচেতন করবে। তিনি বলেন, “এ ভাবেই ছোট ছোট পায়ে চলতে চলতে যদি কিছুটা সচেতনতা বাড়ে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’’
সাদা-খয়েরি রঙের স্কুল ড্রেসের উপর হলুদ রঙের জ্যাকেট পরে ছেলে মেয়েরা এ দিন পথে নেমেছিল। শুধু হেলমেটহীন বাইক চালকদেরই নয়, যাঁরা বাইকে তিন-চার জন করে আরোহী তুলেছেন বা দূষণের কাগজপত্র নেই এমন বাইক চালকদেরও গোলাপ উপহার দেওয়া হয়েছে। এক যুবক হেলমেট ছাড়াই বাইক চালাচ্ছিলেন। তবে বাইকে হেলমেটটি রাখা ছিল। এক ছাত্রীর অনুরোধে লজ্জিত হয়ে দ্রুত হেলমেটটি মাথায় দিয়ে গোলাপ নিয়ে চলে গেলেন। গোলাপ দেওয়ার আগে পড়ুয়ারা নিচু স্বরে বলছিল, ‘‘হেলমেট পড়েননি বলে গোলাপ পেলেন। তবে এটা লজ্জার গোলাপ। ভবিষ্যতে যাতে এমন গোলাপ আর পেতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আপনার জন্য না হোক আপনার পরিবারের লোকেদের কথা ভেবে হেলমেটটা মাথায় দেবেন। তবে কাউকে অসম্মানিত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। সচেতন করতেই আমারা পথে নেমেছি।’’
এ দিন প্রায় ৭৫ জন বাইক চালককে দাঁড় করিয়ে গোলাপ দেওয়া হয়েছে। যাঁদের দূষণের কাগজপত্র ছিল না, তাঁদের বলা হয়েছে, ‘‘ধোঁয়ার কাগজ না থাকলে পরিবেশ দূষিত হয়। দূষণ ছড়ায়। সমাজের জন্য নিয়ম মেনে বাইক চালাবেন।’’ স্কুলের তরফে অশোকনগর থানার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পড়ুয়াদের মনোবল বাড়িয়েছে। তবে পথে বেরিয়ে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েও বাইক চালকেরা বিরক্ত হননি, বরং তাঁরা লজ্জিত। রাস্তায় জ্যামও হয়নি। পড়ুয়ারা মন্তব্য করল, ‘‘এক দিন হয়ত আমরা বাইক চালাব। সে দিন আজকের অভিজ্ঞতার কারণে আমরা নিয়ম মেনেই বাইক চালাব। তা ছাড়া এ দিনের গোলাপ পেয়ে কেউ যদি নূন্যতম সচেতন হন তাহলেই আমরা খুশি।” হেলমেট ছাড়া বেপরোয়া বাইক চালানোর জন্য দুর্ঘটনা যশোহর রোডের নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জখমের সংখ্যারও কোনও হিসাব নেই বলে জানায় তারা। স্কুলের এই উদ্যোগকে প্রশংসা করেছে জেলা পুলিশ ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।