অতসী আন। —নিজস্ব চিত্র।
গোপন ব্যালটে ভোটাভুটিতে বসিরহাট পুরসভার নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন তৃণমূলের অতসী আন। পানীয় জল এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়নই তাঁর প্রথম লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন অতসীদেবী। সেই সঙ্গে ইছামতী-সংলগ্ন এলাকা সুন্দর করে সাজানো হবে বলেও জানান তিনি। বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান নির্বাচন উপলক্ষে হাজির ছিলেন তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিস আলি-সহ দলের নেতৃত্ব। মহকুমাশাসকের প্রতিনিধি অভিজিৎ ঘোষের উপস্থিতিতে শপথ নেন অতসীদেবী।
সম্প্রতি বসিরহাটের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস নেত্রী কৃষ্ণা মজুমদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ-সহ নানা অভিযোগ তুলে তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা অনাস্থা আনেন। ভোটাভুটিতে ১২-১০ ব্যবধানে পরাজিত হন কৃষ্ণাদেবী। ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে কংগ্রেসের হাতে ছিল ৮টি ওয়ার্ড, তৃণমূল ৯টি, সিপিএম ৪টি এবং ১টি আসন ছিল সিপিআইয়ের দখলে। দলের হুইপ অমান্য করে বাম কাউন্সিলরদের তিন জন তৃণমূলের পক্ষে ভোট দেয় বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। দলের কেউ কেউ যে তৃণমূলকে ভোট দিয়ে থাকতে পারেন, সে কথা অস্বীকার করছেন না বাম নেতৃত্বের একাংশও।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ পুরভবনের হলে তৃণমূলের পক্ষে অতসী আনকে পুরপ্রধান পদের জন্য প্রার্থী করা হলে বামেদের সমর্থনে প্রার্থী করা হয় কংগ্রেসের কৃষ্ণা মজুমদারকেই। একটি পদের জন্য দু’জন প্রার্থী হওয়ায় ভোটাভুটির প্রয়োজন দেখা দেয়। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটপর্ব শেষ হয়। গণনায় দেখা যায় অতসীদেবী ১২টি ভোট পেয়েছেন। কৃষ্ণাদেবী পেয়েছেন ১০টি ভোট।
কৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘বামেদের একাংশের বিশ্বাসঘাতকতায় পরাজিত হতে হল। তবে নতুন পুরপ্রধান উন্নয়নের কথা মুখে যতই বলুন না কেন, কার্যক্ষেত্রে দেখা যাবে উন্নয়নের নামে কেবল লুঠতরাজ চলছে।’’
দলের তিন জনকে তৃণমূল টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কাউন্সিলর তথা সিপিএম নেতা শেখ সহিদুল্লা। তিনি বলেন, ‘‘অনাস্থার দিন দলের হুইপ ছিল কংগ্রেসকে সমর্থন করার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দলের তিন কাউন্সিলর তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলায়। তাঁদের আর একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য রাজ্য কমিটি থেকে ওই তিনজনকে এ দিন পুরসভায় না গিয়ে পার্টি অফিসে বসে থাকার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্ত তাঁরা সে কথা না শুনে ভোটাভুটিতে অংশ নিয়ে তৃণমূলকে সমর্থন করলেন। দলের পক্ষে ওই তিন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কারা ওই তিন কাউন্সিলর? গোপাল দাস, শম্পা সাহা এবং শিপ্রা মণ্ডলের নাম করেন সহিদুল্লা।
দলীয় নেতৃত্বের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ করে সিপিএমের কাউন্সিলর গোপালবাবু বলেন, “গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাভুটি হয়েছে। অথচ সহিদুল্লা দাবি করছেন, আমি এবং দলের আরও দুই কাউন্সিলর নাকি তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। গোপন ব্যালটে কে কাকে ভোট দিল তা উনি দেখলেন কী ভাবে?” তাঁর পাল্টা বক্তব্য, “আমরাও তো বলতে পারি, সহিদুল্লা দুই সঙ্গীকে নিয়ে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। তবে যাদের ভোটেই তৃণমূল জয়ী হোক না কেন, অতসী আন জয়ী হয়ে ঠিক হয়েছে। কারণ বিগত কংগ্রেস আমলে দুর্নীতিগ্রস্ত বোর্ডের জন্য বসিরহাটের কোনও উন্নয়নই হয়নি।”
টাকি, বাদুড়িয়ার পরে বসিরহাট পুরসভা তৃণমূলের হাতে আসায় স্বভাবতই খুশি দলের নেতারা। বাজি-পটকা ফাটানো হয় এই উপলক্ষে। ইদ্রিস জানান, ইছামতী-লাগোয়া পার্কগুলির যা শোচনীয় অবস্থা করে গিয়েছে কংগ্রেসের পুরবোর্ড, তার পরিবর্তন করা হবে। ইটিন্ডা, টাকি এবং মার্টিন রোডের উন্নয়ন হবে। আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সরবরাহ ও নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরানো হবে বলে জানান তিনি।